হলিউডের রুপালি পর্দার দাঁতশিল্পী: গ্যারি আর্চারের গল্প। সিনেমা ভালোবাসেন এমন মানুষের কাছে সিনেমার জগৎ এক বিস্ময়কর স্থান।
সিনেমার গল্প বলার কায়দা, অভিনয়শৈলী, ক্যামেরার কারুকাজ—এসবের বাইরেও কিছু বিষয় দর্শককে মুগ্ধ করে, যা সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে না। তেমনই একটি বিষয় হলো সিনেমার চরিত্রদের দাঁত।
আর এই অসাধ্য সাধন করে থাকেন গ্যারি আর্চার নামের একজন শিল্পী, যিনি হলিউডের ‘এফএক্স দাঁতের গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত।
গ্যারি আর্চার এক অসাধারণ শিল্পী, যিনি সিনেমার চরিত্রদের জন্য বিশেষ ধরনের দাঁত তৈরি করেন। তার তৈরি করা দাঁতগুলো এতটাই বাস্তবসম্মত হয় যে, তা সিনেমার গল্পকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
শুধু দাঁত তৈরি করাই নয়, চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী দাঁতের গড়ন তৈরি করাও তার দক্ষতার পরিচয়। কেউ হয়তো চাইছেন ভাঙা দাঁত, কারো প্রয়োজন বাঁকা বা হলদেটে দাঁত।
গ্যারি আর্চার এই সবকিছুই করেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।
আর্চারের কাজের শুরুটা হয় অপ্রত্যাশিতভাবে। তার বাবার একটি ডেন্টাল ল্যাব ছিল।
সেখানে তিনি বাবার কাজে সাহায্য করতেন। নব্বইয়ের দশকে, এক বিখ্যাত মেকআপ শিল্পী, গ্রেগ ক্যানমের মাধ্যমে তিনি সিনেমার জগতে প্রবেশ করেন।
ক্যানমের অনুরোধে তিনি ‘Mrs. Doubtfire’ সিনেমার জন্য এমন কিছু দাঁত তৈরি করেন, যা দৃশ্যধারণের সময় পড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই কাজটি এতটাই প্রশংসিত হয় যে, এরপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
গ্যারি আর্চার শুধু দাঁত তৈরি করেন না, তিনি অভিনেতাদের মুখের মাপ অনুযায়ী বিশেষ ছাঁচ তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন চরিত্রের জন্য কাজে লাগে।
তার কর্মশালায় গেলে দেখা যায়, সারি সারি ছোট ছোট বাক্সে তারকাদের নামের তালিকা। কেভিন বেকন থেকে শুরু করে ড্রিউ ব্যারিমোর, এমনকি হেলেন মিররেনও রয়েছেন সেই তালিকায়।
প্রত্যেকটি বাক্সে রাখা আছে অভিনেতাদের দাঁতের ছাঁচ, যা তাদের বিভিন্ন চরিত্রের জন্য প্রয়োজন হয়। একবার ভাবুন তো, জোনা হিলের দাঁত নাকি তিনি নিজের কাছে, একটি বিশেষ সেফ-গার্ডে সংরক্ষণ করেন!
আর্চারের কাজ শুধু দাঁত তৈরি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে, আর তিনি সেই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন।
এখন তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্য নেন, যা দাঁতের মডেল তৈরি করতে সাহায্য করে। এছাড়া, বিশেষ ইফেক্টের মাধ্যমে দাঁতের রঙ পরিবর্তন করা বা অতিরিক্ত কিছু যোগ করাও এখন অনেক সহজ হয়েছে।
তবে, গ্যারি আর্চারের মতে, “চরিত্রের দাঁত” তৈরি করাই আসল চ্যালেঞ্জ। কারণ, মানুষের আসল দাঁতের মতো স্বাভাবিক এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা বেশ কঠিন।
তিনি মনে করেন, যারা পর্দায় ভিন্নতা চান, তাদের জন্য এই ধরনের দাঁত তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।
গ্যারি আর্চারের কাজের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ‘অস্টিন পাওয়ার্স’ ছবিতে মাইক মাইয়ার্সের দাঁত থেকে শুরু করে ‘মিশন ইম্পসিবল’-এর টম ক্রুজের দাঁত, কিংবা ‘হোয়াইট লোটাস’-এর অভিনেত্রী অ্যামি লু উডের দাঁত—তিনি অসংখ্য সিনেমায় কাজ করেছেন।
তার কাজ সিনেমার চরিত্রদের আরও জীবন্ত করে তোলে, যা দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে।
গ্যারি আর্চারের কাজ শুধু হলিউডের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সিনেমা জগতের জন্য এটি এক অমূল্য সম্পদ। তার সৃষ্টিশীলতা এবং দক্ষতার কারণেই সিনেমার জগৎ আজও এত আকর্ষণীয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান