মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই বাণিজ্য নিয়ে এমন কিছু কথা বলেন যা তথ্যের সঙ্গে মেলে না। সম্প্রতি, তিনি চীন এবং ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ও সম্পর্ক নিয়ে বেশ কয়েকটি ভুল তথ্য দিয়েছেন। এই ধরনের মিথ্যা তথ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জটিলতা বুঝতে সমস্যা তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য, যাদের অর্থনীতি বিশ্ব বাজারের ওপর নির্ভরশীল।
ট্রাম্পের করা প্রধান অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল চীন ও ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি এবং শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো। তিনি দাবি করেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা আসলে সঠিক হিসাবের থেকে অনেক বড়।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ২৬৩ থেকে ২৯৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে।
এছাড়াও, ট্রাম্পের আরেকটি ভুল ধারণা ছিল যে চীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক পরিশোধ করে। বাস্তবে, এই শুল্ক পরিশোধ করে মার্কিন ব্যবসায়ীরা, যার ফলস্বরূপ পণ্যের দাম বাড়ে এবং তা শেষ পর্যন্ত আমেরিকান ভোক্তাদের ওপরই প্রভাব ফেলে।
ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়েও ট্রাম্প বেশ কয়েকটি ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘কিছুই’ কেনে না। তবে, সরকারি তথ্য বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০২৪ সালে প্রায় ৬৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৭০,০০০ বিলিয়ন টাকার সমান) মূল্যের পণ্য ও পরিষেবা আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
ট্রাম্প আরও দাবি করেন যে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিজাত পণ্য আমদানি করে না। কিন্তু, মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ইইউ ২০২৪ সালে প্রায় ১২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১,৪০০ বিলিয়ন টাকার সমান) মূল্যের কৃষি পণ্য আমদানি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।
এমনকি, ট্রাম্পের এই দাবিও সঠিক নয় যে ইউরোপ মার্কিন গাড়ি কেনে না। ইউরোপীয় অটোমোবাইল প্রস্তুতকারকদের একটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ইইউতে প্রায় ১৬৪,৮৫৭টি মার্কিন গাড়ি রপ্তানি করা হয়েছে, যার মূল্য ছিল প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৯০০ বিলিয়ন টাকার সমান)।
বাণিজ্য ঘাটতি বলতে একটি দেশের আমদানি ও রপ্তানির মধ্যেকার পার্থক্যকে বোঝায়। যদি একটি দেশ অন্য দেশের চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে, তাহলে সেই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি হয়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে, বাণিজ্য ঘাটতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ধরনের মিথ্যা তথ্যগুলো একদিকে যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে। তাই, নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: CNN