আতঙ্ক! আত্মহত্যা রুখতে স্বাস্থ্যখাতে বড় সাফল্য?

শিরোনাম: আত্মহত্যা প্রতিরোধের এক নতুন দিশা: ‘জিরো সুইসাইড মডেল’-এর সাফল্যের প্রমাণ

বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার প্রবণতা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এই সমস্যা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতে নতুন এক মডেলের সফল প্রয়োগের খবর পাওয়া গেছে, যা আত্মহত্যার সংখ্যা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ‘জিরো সুইসাইড মডেল’ নামক একটি পদ্ধতির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো আত্মহত্যার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সক্ষম হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট-ভিত্তিক ‘হেনরি ফোর্ড হেলথ’-এ ২০০১ সালে এই মডেলটির সূচনা হয়।

এই মডেলে আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং, তাদের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি এবং মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সেইসঙ্গে, আত্মহত্যার সম্ভাব্য উপকরণ, যেমন— আগ্নেয়াস্ত্র বা ক্ষতিকর ঔষধ থেকে তাদের দূরে রাখতেও সাহায্য করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ‘জিরো সুইসাইড মডেল’ ব্যবহারের ফলে হেনরি ফোর্ড হেলথে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা ‘কাইজার পারমানেন্ট’-এ ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই মডেল প্রয়োগ করে আত্মহত্যা ও আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা কমানো সম্ভব হয়েছে।

গবেষণা অনুযায়ী, এই মডেল প্রয়োগের ফলে আত্মহত্যার চেষ্টা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে।

গবেষণাটির প্রধান লেখক ব্রায়ান আহমেদানি জানিয়েছেন, এই মডেলের সফলতার কারণে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বছরে প্রায় ১৬৫ থেকে ১৭০টি আত্মহত্যার চেষ্টা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যাথরিন কেইস এই গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সক্রিয় হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, যারা আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকে, তাদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।”

এই মডেলের মূল ধারণা হলো— যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আত্মহত্যার কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া।

এর মধ্যে কাউন্সেলিং, উপযুক্ত চিকিৎসা এবং আত্মহত্যার উপকরণ থেকে দূরে রাখা অন্যতম।

বাংলাদেশেও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এই মডেলের ধারণা কাজে লাগানো যেতে পারে।

বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ এখনো সীমিত। তবে, আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

স্বাস্থ্যকর্মী, পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আত্মহত্যার প্রবণতা কমানো সম্ভব।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।

এই গবেষণার ফলাফল আত্মহত্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

আমাদের সকলেরই উচিত— মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সহায়তায় এগিয়ে আসা।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *