মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবহাওয়ার খেলায় ভিন্ন চিত্র: পূর্বে শীতের আমেজ, পশ্চিমে গ্রীষ্মের প্রস্তুতি।
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে যেখানে কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি ও বন্যার তাণ্ডব চলছে, সেখানে শীতের আগমন ঘটেছে যেন অপ্রত্যাশিতভাবে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে দেশটির পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি নেমে এসেছে, যা মার্চ মাসের প্রথম দিকের আবহাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় উপকূল থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকাল নাগাদ তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর ফলে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন এবং উদ্ধারকর্মীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
কেন্টাকি রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ডি বেশেয়ার এক সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক করে বলেছেন, “যারা বন্যা কবলিত এলাকায় বসবাস করছেন এবং যাদের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য রাতের বেলা হাইপোথারমিয়া (শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া) একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।”
কয়েক দিন ধরে চলা ঝড়ের কারণে কেন্টাকির কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর পানি বেড়ে যায়।
মঙ্গলবার সকাল নাগাদ রাজ্যের অধিকাংশ এলাকার তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে যেতে পারে এবং কিছু অংশে তা মাইনাস ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (mid-20s in Fahrenheit) নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
গভর্নর বেশেয়ার ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শুধু কেন্টাকি নয়, টেনেসিতেও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
টেক্সাস থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত মঙ্গলবার সকালে তাপমাত্রা ৪ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে পারে।
দুর্যোগ কবলিত কেন্টাকি, টেনিসি এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আরকানসাসের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মঙ্গলবার দিনের বেলা তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে, যা উদ্ধারকাজকে আরও কঠিন করে তুলবে।
ফেব্রুয়ারির মতো ঠান্ডা পরিস্থিতি কানাডার সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
নিউইয়র্ক ও নিউ ইংল্যান্ডের উঁচু এলাকাগুলোতে মঙ্গলবার দুপুরে তাপমাত্রা মাইনাস ১ থেকে মাইনাস ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে পারে।
এছাড়া, তুষারপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে, বিশেষ করে দক্ষিণ অঞ্চলে।
তবে অনেক এলাকায় অন্তত শনিবার পর্যন্ত এই শীতের আবহাওয়া বজায় থাকতে পারে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে আবহাওয়ার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। পূর্বাঞ্চলে যখন শীতের আমেজ, তখন সেখানে গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হতে চলেছে।
আবহাওয়ার এই বিপরীতমুখী পরিবর্তনের কারণ হলো বায়ুমণ্ডলের একটি শক্তিশালী পরিবর্তন, যার ফলে ঠান্ডা বাতাস কানাডা থেকে পূর্বাঞ্চলে এবং উষ্ণ বাতাস মেক্সিকো থেকে পশ্চিমাঞ্চলে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ সপ্তাহের শুরুতেই পশ্চিমাঞ্চলের কিছু অংশে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে।
সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে রকি পর্বতমালা পর্যন্ত বসন্তের শেষ অথবা গ্রীষ্মের শুরু মতো আবহাওয়া অনুভূত হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ফিনিক্স শহরে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পৌঁছাতে পারে।
সাধারণত মে মাসের শুরুতে এই তাপমাত্রা দেখা যায়।
শুক্রবার নাগাদ তাপমাত্রা আরও বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (low 100s in Fahrenheit) কাছাকাছি যেতে পারে, যা এপ্রিল মাসের তুলনায় জুন মাসের আবহাওয়ার সঙ্গে বেশি মানানসই।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার লাস ভেগাসেও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কাছাকাছি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হতে পারে, যা সাধারণত মে মাসের আগে দেখা যায় না।
ডেনভারে শুক্রবার বছরের প্রথম ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা এবং শনিবার প্রায় ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।