ফিরে এল ঝিঁঝিঁ পোকা: এবার ‘সবচেয়ে বড় ঝাঁক’!

বহু বছর পর, আমেরিকার পূর্বাঞ্চলে ঝিঝি পোকার এক বিশাল দল আবার মাটি ফুঁড়ে বাইরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ঝিঝি পোকাদের জীবনচক্র বেশ দীর্ঘ, বিশেষ করে এদের একটি দল আছে যারা প্রতি সতেরো বছর পর দলবদ্ধভাবে আবির্ভূত হয়।

এই বিশেষ দলটিকে বলা হয় ‘ব্রুড ১৪’ এবং এদের আগমন প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি অসাধারণ ঘটনা। বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাটিকে ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী’ বা ‘মাদার অফ অল ব্রুডস’ হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্রুড ১৪-এর ঝিঝি পোকারা আসলে এক ধরনের পুরনো প্রজাতি, যাদের বংশধর থেকেই অন্যান্য ১৭ বছর পর পর আসা ঝিঝি পোকার দলগুলির উদ্ভব হয়েছে। এদের জীবনচক্রের শুরুটা হয় মাটির নিচে, যেখানে তারা প্রায় এক যুগ ধরে গাছের শিকড়ের রস খেয়ে বাঁচে।

তারপর, একটি নির্দিষ্ট সময়ে, এরা দলবদ্ধভাবে মাটি থেকে উপরে উঠে আসে। এদের শরীর বাদামী রঙের হয়ে থাকে এবং এদের চোখগুলো লাল রঙের হয়।

এই ঝিঝি পোকারা আকারে বেশ বড় হয়, যা প্রায় একটি সাধারণ গাজরের সমান। এদের আগমন শুধু একটি প্রাকৃতিক ঘটনাই নয়, বরং পরিবেশ বিজ্ঞানীদের জন্য মূল্যবান একটি গবেষণা ক্ষেত্রও বটে।

বিজ্ঞানীরা এই পোকাদের জীবনযাত্রা, তাদের পরিবেশের উপর প্রভাব এবং বিবর্তনের প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এদের আগমন সময়ের পরিবর্তন হতে পারে।

ঐতিহাসিক দিক থেকেও এই ঝিঝি পোকাদের গুরুত্ব রয়েছে। ১৬৩৪ সালে, আমেরিকার প্লিমথ কলোনিতে (Plymouth Colony) আসা প্রথম দিকের অভিবাসীরা এই পোকাদের আগমন প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং সে সময়ের নথিপত্রে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।

এমনকি আদি আমেরিকানরাও এই পোকাদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতেন।

বর্তমানে, বিজ্ঞানীরা ‘সিক্যাডা সাফারী’ (Cicada Safari) নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করে ঝিঝি পোকাদের আগমন ট্র্যাক করেন এবং তাদের ছবি তোলেন। এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করে তারা একটি বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করেন, যা ভবিষ্যতে তাদের গবেষণা কাজে লাগবে।

গত বছর, প্রায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার ছবি এই অ্যাপের মাধ্যমে জমা হয়েছিল।

যদিও এই পোকারা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে এদের বিশাল সংখ্যা অনেক মানুষের কাছে উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভয়ের কিছু নেই, কারণ ঝিঝি পোকারা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।

বরং, যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন, তারা এই বিরল দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সাহায্য করতে পারেন।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *