বংশপরিচয়: নিজের শিকড় খুঁজতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন ড. হেনরি লুই গেটস!

শিকড়ের সন্ধানে: নিজের শিকড় খুঁজে বের করলেন ‘ফাইন্ডিং ইউর রুটস’-এর উপস্থাপক, ড. হেনরি লুই গেটস জুনিয়র।

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল পিবিএস-এর (PBS) অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘ফাইন্ডিং ইউর রুটস’-এর পরিচিত মুখ ড. হেনরি লুই গেটস জুনিয়র। ১১টি সিজনে তিনি এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অতিথিদের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাদের পূর্বপুরুষদের অজানা কাহিনী তুলে ধরেছেন।

এবার সেই তিনিই হাজির হয়েছেন অতিথি হিসেবে, যেখানে উন্মোচিত হয়েছে তার নিজের পরিবারের গোপন ইতিহাস।

অনুষ্ঠানে জানা যায়, ড. গেটসের প্রপিতামহী জেন গেটস সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে অজানা কিছু তথ্য লুকিয়ে ছিল। এই তথ্য তার বংশপরিচয়কে নতুন দিকে মোড় দেয় এবং আয়ারল্যান্ড পর্যন্ত তার শিকড় খুঁজে বের করতে সহায়তা করে।

এই আবিষ্কার গেটসকে এতটাই আবেগাপ্লুত করে তোলে যে, তিনি অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি।

‘ফাইন্ডিং ইউর রুটস’ শুধু একটি টিভি অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

পিবিএস-এ প্রচারিত নন-ড্রামা প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও এর দর্শক সংখ্যা অনেক।

এমনকি, দশম সিজনটি প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ দর্শকের কাছে পৌঁছেছিল এবং প্রথমবারের মতো এমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়নও পেয়েছিল।

অনুষ্ঠানটির প্রধান বার্তা হলো, ‘আমেরিকা একটি অভিবাসী দেশ এবং এই অভিবাসীদের মাধ্যমেই দেশটির উন্নতি হয়েছে’। গেটস মনে করেন, মানুষের মধ্যেকার শারীরিক ভিন্নতা সত্ত্বেও, ডিএনএ-র (DNA) বিচারে আমরা সবাই ৯৯.৯৯ শতাংশ একই।

অনুষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সেলিব্রিটি তাদের পরিবারের গোপন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন। সম্প্রতি এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অভিনেতা ড্যাক্স শেপার্ড ও অভিনেত্রী ক্রিস্টেন বেল, শেফ জোস আন্দ্রেস, অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন এবং আমান্ডা সেফ্রাইড।

তারা তাদের পূর্বপুরুষদের অজানা কাহিনী জানতে পারেন।

অনুষ্ঠানটির নির্মাতা ডিলান ম্যাকগি জানান, এই ধরনের পারিবারিক যোগসূত্রগুলো মানুষকে অজান্তেই প্রভাবিত করে।

তিনি আরও যোগ করেন, অতীতে ফিরে যাওয়া অনেক সময় আমাদের নিজেদের গল্পকে আরও বেশি অর্থবহ করে তোলে।

২০০৬ সালে ‘আফ্রিকান আমেরিকান লাইভস’ (African American Lives) নামে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল। ড. গেটস এই অনুষ্ঠানের ধারণা তৈরি করেন।

শুরুতে তিনি বিশিষ্ট কৃষ্ণাঙ্গ সেলিব্রিটিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের পরিবারের ইতিহাস অনুসন্ধান করতেন। তাদের বংশতালিকা তৈরি করতে গিয়ে যখন কোনো তথ্য পাওয়া যেত না, তখন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তারা আফ্রিকার কোন জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, তা জানার চেষ্টা করা হতো।

পরে, দর্শকদের আগ্রহের কারণে শ্বেতাঙ্গ সেলিব্রিটিদেরও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং এর নামকরণ করা হয় ‘ফেসেস অফ আমেরিকা’। পরে এই নামটি পরিবর্তন করে ‘ফাইন্ডিং ইউর রুটস’ রাখা হয়।

এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ডিএনএ সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে পারেন গেটস।

অনুষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির পরিবারের অজানা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নাটালি মোরালেস ক্যারিবীয় জলদস্যুদের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। এছাড়াও, ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’-এর সাবেক তারকা অ্যান্ডি সামবার্গ তার পিতামহ-মাতামহীকে খুঁজে পান।

একই অনুষ্ঠানে জানা যায়, রুপল এবং মার্কিন সিনেটর কোরি বুকার সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন। মেরিল স্ট্রিপ ও ইভা লঙ্গোরিয়াও একে অপরের আত্মীয়।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ান, জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তুলসী গাবার্ড, ফ্যাশন ডিজাইনার ডায়ানে ফন ফার্স্টেনবার্গ এবং ‘গেম অফ থ্রোনস’-এর লেখক জর্জ আর. আর. মার্টিন।

ড. গেটস সবসময় তার অতিথিদের বলেন, তাদের পূর্বপুরুষদের করা খারাপ কাজের জন্য তারা দায়ী নন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, অতীতে মানুষ কীভাবে কাজ করেছে, তা বিচার না করে বোঝার চেষ্টা করা উচিত।

গবেষকরা জানান, বংশ পরম্পরায় চলে আসা পারিবারিক গল্পগুলোতে অনেক সময় কিছু ভুল তথ্য থাকে।

গেটস বলেন, “যেখানে ধোঁয়া আছে, সেখানে আগুনও আছে। গল্পগুলো সবসময় নির্ভুল না হলেও, অনেক কাছাকাছি হয়। সেখানে সত্যের একটা বীজ থাকে।”

জেন গেটসের প্রপিতামহীর পরিচয় উন্মোচন করতে গবেষকদের চার বছর লেগেছিল।

জেনের সন্তানদের বাবা কে ছিলেন, সেই রহস্যও উন্মোচন করা হয়। গেটস বলেন, তিনি এ ধরনের হাজারো দলিল দেখেছেন, তবে এই ঘটনাটি তার কাছে অন্যরকম ছিল।

জেন গেটসের একটি ছবি দেখে তিনি বলেন, “আমি তার চোখে অনেক কষ্ট দেখতে পাচ্ছি এবং এখন আমি জানি কেন।”

ডিলান ম্যাকগি বলেন, “ঐ দিন তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছিল।

তিনি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আজ আমার জীবনের সেরা দিন!’”

ড. গেটস মনে করেন, প্রত্যেক মানুষেরই তার পারিবারিক ইতিহাস অনুসন্ধান করা উচিত।

তিনি অতীতের কথা ভুলে যাওয়ার ধারণার বিরোধিতা করেন।

তিনি বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে জানা আমাদের নিজেদের সম্পর্কে জানার জন্য অপরিহার্য।”

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *