বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের সংকটকালে, নিউজিল্যান্ডের পরিবেশ নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সেখানকার প্রকৃতি ও প্রতিবেশের উপর গভীর উদ্বেগের চিত্র ফুটে উঠেছে।
দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় ‘আওয়ার এনভায়রনমেন্ট ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জলজ প্রাণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাখির প্রজাতি এবং সরীসৃপদের বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছে। একইসঙ্গে, জল দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও আগ্রাসী প্রজাতির বিস্তার দেশটির পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের স্বাদুপানির ৭৬ শতাংশ মাছ, ৬৮ শতাংশ পাখি, ৭৮ শতাংশ স্থলভাগের পাখি, ৯৩ শতাংশ ব্যাঙ এবং ৯৪ শতাংশ সরীসৃপ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেমস পামার এই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “বিষয়টি উদ্বেগের, যা আমাদের জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।”
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, দেশটির ভূগর্ভস্থ পানির একটি বড় অংশে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এটি মূলত প্রাণী ও মানুষের শরীরে পাওয়া যাওয়া এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া, যা গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে।
২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি ভূগর্ভস্থ পানির নমুনা পরীক্ষা করে অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা পানীয় জলের জন্য নির্ধারিত মানদণ্ডের থেকে অনেক বেশি।
এছাড়াও, অতিরিক্ত নাইট্রেটের কারণেও অনেক এলাকার পানি দূষিত হচ্ছে, যার প্রধান কারণ হলো ব্যাপক হারে চাষাবাদ, বনভূমি ধ্বংস এবং নগরায়ন।
ওয়েলিংটনের ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র গবেষক ড. মাইক জয় এই প্রতিবেদনের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “প্রতিবেদনটি নিউজিল্যান্ডের পরিবেশের ক্রমাগত অবনতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ ‘পরিচ্ছন্ন-সবুজ নিউজিল্যান্ড’-এর ধারণা যে একটি ভুল ধারণা, তা এই প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে প্রকাশ হয়েছে এবং সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা।”
প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডে ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বাড়ছে, যা মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ এবং ৫ লক্ষ বাড়িঘর বন্যাপ্রবণ এলাকা ও উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
তবে, প্রতিবেদনে কিছু ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে।
বিশেষ করে, বায়ু দূষণ হ্রাসে দেশটির অগ্রগতি হয়েছে।
যানবাহনের নির্গমন হ্রাসের মান উন্নয়ন, কম দূষণকারী গাড়ির ব্যবহার এবং উন্নত ইঞ্জিন ও জ্বালানির কারণে বায়ুর গুণগত মান বাড়ছে।
জেমস পামার এ বিষয়ে বলেন, “আমরা ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে রয়েছি এবং এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।”
তথ্যসূত্র: The Guardian