শিরোনাম: বিশ্বে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা এক দশকে সর্বোচ্চ, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ইরান, ইরাক ও সৌদি আরবের ভূমিকা।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিশ্বে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক দশকের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ, যা মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। এই বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইরান, ইরাক এবং সৌদি আরবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বৃদ্ধি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের সংখ্যা কমে এসেছে, কিন্তু বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর হিসাব অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বজুড়ে অন্তত ১ হাজার ৫১৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ চীন, উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতেও ব্যাপক হারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যা তাদের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ইরান, ইরাক ও সৌদি আরবের কথা। এই তিনটি দেশ সম্মিলিতভাবে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুদণ্ডের ৯১ শতাংশের জন্য দায়ী। ইরাকে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ, যেখানে কমপক্ষে ১৬ জনের জায়গায় ৬৩ জনের বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
সৌদি আরবেও মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে, যা ২০১৭ সালের চেয়ে দ্বিগুণ। এছাড়া, ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত বছর দেশটিতে অন্তত ৯৭২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যেখানে অন্তত ৩০ জন নারী ছিলেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর মতে, ইরানের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়া, ইরাকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে এবং অন্যান্য দেশেও বিভিন্ন অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিশর, সিঙ্গাপুর এবং ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতেও মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে।
অন্যদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড এখনো কিছু দেশে রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিশ্বের অনেক দেশ মৃত্যুদণ্ড বিলোপের দিকে ঝুঁকছে।
বর্তমানে ১১৩টি দেশ মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেছে এবং ১৪৫টি দেশ হয় আইন করে অথবা কার্যতভাবে মৃত্যুদণ্ড রহিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রেও মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা বেড়েছে, যা উদ্বেগের আরেকটি কারণ। যদিও বিশ্বে মৃত্যুদণ্ড বিলোপের প্রবণতা বাড়ছে, তবুও কিছু দেশে এর প্রয়োগ মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মনে করে, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী এবং মাদক পাচার রোধে এর কোনো প্রমাণ নেই।
বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান প্রচলিত আছে, তবে এর প্রয়োগ তুলনামূলকভাবে কম। বাংলাদেশের আইনে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে থাকে এবং এটিকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান