মার্কিন বাণিজ্য: ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে বেসেন্টের গোপন বার্তা!

**ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি: দ্বিধা-বিভক্ত প্রশাসনের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা**

আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর, তাঁর প্রশাসনের অভ্যন্তরেই দেখা যাচ্ছে ভিন্ন মত। একদিকে, বাণিজ্য চুক্তিগুলোকে আরও সুসংহত করার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, শুল্কনীতিকে একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজাতে পারে।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট সম্প্রতি মার-এ-লাগোতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে বেসেন্ট শুল্কনীতি নিয়ে প্রশাসনের বক্তব্যকে সুসংগত করার এবং এর চূড়ান্ত লক্ষ্যের ওপর জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তাঁর মতে, এর মাধ্যমে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভালো বাণিজ্য চুক্তি করা সম্ভব হবে। অন্যথায়, বাজারের অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বিষয়ে ঐকমত্যের অভাব স্পষ্ট। একদিকে যেমন কিছু উপদেষ্টা বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছেন, তেমনি অনেকে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যন্ত শুল্ক কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পের মনোভাব জানতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সহ প্রায় ৭০টি দেশ শুল্কের বিষয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। জানা গেছে, ইইউ তাদের অটোমোবাইল এবং শিল্পপণ্যের ওপর শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে, শুল্ক কমানো হবে কিনা, সেই বিষয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে, এই শুল্কনীতি দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকার জন্য লাভজনক হবে। তাঁরা বিদেশি অংশীদারদের কাছ থেকে সেরা প্রস্তাবগুলো পেতে চাইছে এবং এর বিনিময়ে উপযুক্ত চুক্তি করতে আগ্রহী। হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেক দেশই এখন তাদের সেরা প্রস্তাব নিয়ে আসছে, এবং ট্রাম্প এর মধ্যে থেকে আমেরিকার জন্য সবচেয়ে ভালো চুক্তিটি বেছে নেবেন।

তবে, প্রশাসনের মধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে। ট্রেড বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাভারো, শুল্ক কমানোর কোনো সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এটি কোনো “আলোচনা” নয়, বরং বিশ্ব বাণিজ্যকে নতুনভাবে সাজানোর একটি উপায়।

হোয়াইট হাউজের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান স্টিফেন মিরান স্বীকার করেছেন, এই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তিনি মনে করেন, ভিন্নমত থাকতেই পারে এবং এর মাধ্যমে দলগত চিন্তাভাবনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।

এই দ্বিধা-বিভক্ত অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি, একটি ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাজারে দ্রুত পরিবর্তন দেখা গেছে। এই পরিস্থিতিতে, ট্রাম্প পরিষ্কার করেছেন যে তিনি শুল্ক স্থগিত করার কোনো পরিকল্পনা করছেন না। তিনি আরও বলেছেন, ভালো চুক্তি না হলে তিনি কোনো দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য সম্পর্ক রাখবেন না।

বর্তমানে, ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ওপর জোর দিচ্ছে। বিভিন্ন উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী, আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দ্রুত কিছু চুক্তি করা প্রয়োজন, যা জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই শুল্কনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক এবং কৃষি খাতের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *