যুদ্ধকালীন আইনে বিতাড়ন: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তোলপাড়!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, যা অভিবাসন বিষয়ক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আদালত জানিয়েছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন পুরনো একটি আইন ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে পারবে।

তবে বিতাড়িত করার আগে তাদের শুনানির সুযোগ দিতে হবে। এই রায়টি অভিবাসন আইন এবং মৌলিক অধিকারের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।

আদালতের ৫-৪ ভোটে দেওয়া এই রায়ে, নিম্ন আদালতের একটি সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। নিম্ন আদালত, ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ (Alien Enemies Act) অনুযায়ী হওয়া বিতাড়ন প্রক্রিয়াকে সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই আইনটির ব্যবহার দেখা গেলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এর প্রয়োগ ছিল খুবই বিরল। ট্রাম্প প্রশাসন এই আইনের আশ্রয় নিয়ে ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ নামক একটি গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অভিযুক্ত ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিতাড়িত করতে চেয়েছিল।

তাদের দাবি ছিল, এই গ্যাং যুক্তরাষ্ট্রে ‘অনিয়মিত যুদ্ধ’ পরিচালনা করছে।

আদালতের এই রায়ের ফলে, বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের আইনি অধিকারের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বিতাড়ন প্রক্রিয়া চালু থাকলেও, বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের নিজেদের বক্তব্য পেশ করার এবং আদালতের কাছে আপিল করার সুযোগ দিতে হবে।

অর্থাৎ, তাদের ‘ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া’ (due process) নিশ্চিত করতে হবে।

এই রায়ের বিরোধিতা করে তিনজন উদারপন্থী বিচারপতির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন রক্ষণশীল বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট। অন্যদিকে, এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (American Civil Liberties Union – ACLU), যারা এই মামলায় পাঁচজন ভেনেজুয়েলার নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহে, সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের আরেকটি রায়কে স্থগিত করেছে। এই রায়ে, ভুল করে বিতাড়িত হওয়া একজন সালভাদরের নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের ওই ব্যক্তি, যিনি একজন মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে বিবাহিত, তাকে গত ১৫ই মার্চ ভুল করে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়।

২০১৯ সালে একটি আদালতের রায়ে গার্সিয়াকে বিতাড়ন থেকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল, কারণ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, নিজ দেশে ফেরত পাঠালে তিনি গ্যাংয়ের হামলার শিকার হতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আইনজীবীরা অবশ্য দাবি করেছেন, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া আন্তর্জাতিক কুখ্যাত গ্যাং ‘এমএস-১৩’-এর সদস্য। যদিও গার্সিয়ার আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ট্রাম্প প্রশাসন জানুয়ারিতে এমএস-১৩ গ্যাংকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের এই সাময়িক স্থগিতাদেশের ফলে, আদালত এখন এই মামলার বিস্তারিত বিবেচনা করার জন্য আরও সময় পাবে।

এই রায়গুলো অভিবাসন বিষয়ক জটিলতা এবং আইনি অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একইসঙ্গে, বিতর্কিত ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর প্রয়োগ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অভিবাসন নীতি এবং বিচার বিভাগের কার্যক্রমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *