যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে তীব্র রূপ নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন, যার প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদরা।
খবর অনুযায়ী, চীন যদি তাদের বিদ্যমান ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের উপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে চীন একে ‘ব্ল্যাকমেইল’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ভুল পথে হাঁটলে চীন শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া-র এক সম্পাদকীয়তে ট্রাম্পকে ‘নগ্ন ব্ল্যাকমেইল’ করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। গত সোমবার এশিয়ার বিভিন্ন বাজারে দরপতন হয়।
জাপানের নিক্কেই সূচক মঙ্গলবার ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ১৯৯৭ সালের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারও এই অস্থিরতা থেকে মুক্ত ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতির কারণে শুধু চীন নয়, অন্যান্য দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের কিছু মার্কিন পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে।
তাইওয়ানও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে। তারা শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের উপরও পড়তে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান এই বাণিজ্য বিরোধের কারণে বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের উপর এর একটা প্রভাব পড়তে পারে, কারণ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিত হবে বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বিবেচনা করে নিজেদের বাণিজ্য নীতি নির্ধারণ করা। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক বাজারের এই পরিবর্তনে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আসলে, বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান