শিরোনাম: সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা: কারণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সিরিয়ার পক্ষ থেকে এই হামলাকে সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে ইসরায়েল এটিকে নিজেদের নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে দাবি করছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সিরিয়ায় “বৈরী শক্তি”র উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে এই হামলার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে চাইছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, ক্যাটজ, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল-শারাকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি তোমরা সিরিয়ায় বিদেশি শক্তির প্রবেশ করতে দাও, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলে তোমরা কঠিন মূল্য দেবে।” তবে তিনি ঠিক কী ধরণের “বৈরী শক্তি”র কথা বলছেন, তা স্পষ্ট করেননি।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সিরিয়ার হামা বিমানঘাঁটিতে চালানো এক হামলায় ঘাঁটিটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এবং বহু লোক আহত হয়। এছাড়াও, কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ তাই ৪ বিমানঘাঁটিতেও আঘাত হানে ইসরায়েল।
এই ঘাঁটিটি দামেস্ক ও হোমসের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সড়কের পাশে অবস্থিত, যা সামরিক দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্ক এই ঘাঁটিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বিমান মোতায়েন করতে আগ্রহী ছিল বলেও শোনা যায়।
অন্যদিকে, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেরা প্রদেশের নাওয়া শহরের কাছে ইসরায়েলি হামলায় ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় এবং আরো অনেকে আহত হয়। সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে কখনোই কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিল না।
ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট আল-শারা ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ চান না বলে জানিয়েছিলেন। তিনি কখনোই সিরিয়ার মাটি ব্যবহার করে অন্য কোনো পক্ষের ইসরায়েলে হামলার অনুমতি দেবেন না বলেও উল্লেখ করেন।
তবে, তিনি ইসরায়েলের হামলা এবং গোলান মালভূমি দখলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
ইসরায়েল সরকার সিরিয়ার বর্তমান সরকারকে “ইদলিব থেকে আসা একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী” হিসেবে অভিহিত করে। তারা প্রায়ই আল-শারা নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র গোষ্ঠী, “হায়াত তাহরির আল-শাম” (এইচটিএস)-এর কথা উল্লেখ করে, যারা গত ডিসেম্বরে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল।
ইসরায়েল দাবি করে যে, তারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা ‘এইচটিএস’ অথবা নতুন সিরীয় সেনাবাহিনীর কোনো শক্তিকে দামেস্কের দক্ষিণে প্রবেশ করতে দেব না।”
আল-আসাদের পতনের পরপরই ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার ডি-সামরিকীকৃত অঞ্চলে প্রবেশ করে, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইয়রমুখ নদীর অববাহিকা এবং আল-ওহেদা বাঁধও রয়েছে।
নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন যে, তারা সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করবে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরস্কের প্রভাব খর্ব করতে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রে লবিং করছে। ইসরায়েল চাইছে রাশিয়া যেন সিরিয়ায় তাদের ঘাঁটিগুলো বজায় রাখে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা রাশিয়ার পরিবর্তে তুরস্ককে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সমর্থন করতে রাজি ছিলেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলকে সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, “এই অঞ্চলে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই সম্প্রসারণবাদী নীতি ত্যাগ করতে হবে, দখলকৃত এলাকা থেকে সরে আসতে হবে এবং সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলোতে সহায়তা করতে হবে।”
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তুরস্ক বিরোধীপক্ষের প্রতি সমর্থন জুগিয়েছিল এবং বর্তমানে দামেস্কে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
সিরীয় লেখক ও গবেষক রবিন ইয়াসিন কাসাবের মতে, ইসরায়েলের এই ধরনের পদক্ষেপ নতুন কিছু নয়। তিনি বলেন, “ইসরায়েল সুযোগসন্ধানী এবং তারা সবসময়ই তাদের সুবিধার দিকে তাকায়।
যদি তারা আরও বেশি অঞ্চল দখল করতে পারে, তবে তারা তা করবে।”
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা