রাজনৈতিক অস্থিরতা: সিনেমা কীভাবে পথ দেখায়?

শিরোনাম: সিনেমার আয়নায় রাজনৈতিক অস্থিরতা: বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধের গল্প

রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, আর মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে যুগে যুগে সিনেমাই যেন তুলে ধরেছে প্রতিবাদের ভাষা। কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, অবিচার আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গল্পগুলো সিনেমার পর্দায় জীবন্ত হয়ে ওঠে, যা দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন সিনেমায় এই প্রতিবাদের ভাষা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

কোস্টা-গাভরাসের ‘জেড’ (Z) সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৯ সালে। গ্রিসের একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিনেমা গণতন্ত্রের অবক্ষয় এবং রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে। ছবিটিতে গ্রিক বামপন্থী নেতা গ্রিগোরিস লামব্রাকিসের ১৯৬৩ সালের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ক্ষমতা কাঠামোকে প্রশ্ন করা হয়েছে।

শুধু ‘জেড’ নয়, আরও অনেক সিনেমা এই ধরনের প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি। স্ট্যানলি কুবরিকের ‘স্পার্টাকাস’ (Spartacus) সিনেমায় দেখা যায়, কিভাবে একদল ক্রীতদাস বিদ্রোহের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে। এই ছবিতে দেখানো হয়েছে, কিভাবে মানুষ তাদের স্বাধীনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সংগ্রাম করতে পারে। সিনেমাটি দর্শকদের মধ্যে আজও প্রতিরোধের চেতনা জাগায়।

‘ভি ফর ভেন্ডেটা’ (V for Vendetta) সিনেমাটি একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের গল্প। এখানে একজন মুখোশধারী বিপ্লবী সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সিনেমাটি সমাজের উপর সরকারের প্রভাব এবং একটি ধারণার শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে, যা আজও প্রাসঙ্গিক।

ফরাসি পরিচালক লাজ লি’র ‘লে মিজারেবল’ (Les Misérables) সিনেমাটি প্যারিসের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর পুলিশের অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরে। এটি একটি শক্তিশালী প্রতিবাদের গল্প, যা সমাজের দুর্বল শ্রেণির মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। একই ধরনের একটি প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘দ্য সিজ’ (The Siege) সিনেমাটি। এখানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে একটি শহরের উপর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনেমাগুলো কেবল বিনোদন দেয় না, বরং একটি সমাজের প্রতিচ্ছবিও তৈরি করে। এই সিনেমাগুলো আমাদের দেখায়, কিভাবে ক্ষমতা কাঠামো দুর্বলদের কণ্ঠরোধ করে এবং কিভাবে মানুষ তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারে। সিনেমাগুলো মানুষকে সচেতন করে তোলে, তাদের মধ্যে প্রতিরোধের মানসিকতা তৈরি করে এবং একটি ন্যায়বিচারের সমাজ গঠনের জন্য উৎসাহিত করে।

সিনেমাগুলি, শিল্পী লাজ লি’র ভাষায়, “অন্যায্য বাস্তবতাকে তুলে ধরে।” এই সিনেমাগুলো আমাদের সময়ের প্রতিচ্ছবি, যা সমাজে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *