**মার্চে বিশ্বজুড়ে উষ্ণতার রেকর্ড: জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনে শঙ্কা, বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা**
বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন বর্তমানে এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (C3S) এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড গড়েছে।
বিশেষ করে, ইউরোপে এই সময়ে উষ্ণতা ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চে ইউরোপের গড় তাপমাত্রা ছিল ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি, যা এর আগের সর্বোচ্চ ২০১৪ সালের মার্চের চেয়ে ০.২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। একই সময়ে, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তীব্র তাপপ্রবাহ, ভারী বৃষ্টিপাত এবং খরা जैसी চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন ঘটবে। ইউরোপের অনেক অঞ্চলে মার্চ মাসে হয় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, না হয় দেখা দিয়েছে তীব্র খরা।
শুধু ইউরোপ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে অন্যান্য অঞ্চলেও। মধ্য এশিয়ায় তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা গেছে, যা সেখানকার জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এছাড়া, আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোতে অতিবৃষ্টির কারণও এই জলবায়ু পরিবর্তন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত হচ্ছে, যার মূল কারণ হল জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার।
এই পরিস্থিতিতে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, কোনো কোনো দেশে এই বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব দেখা যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘গুজব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনেছিলেন।
যদিও, ২০১৯ সালে প্রায় ২০০টি দেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগের কারণে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এমতাবস্থায়, কার্বন নিঃসরণ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
তাই, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য সতর্ক থাকা অপরিহার্য। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে, কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা