ফ্যাশন জগৎ থেকে হারিয়ে গেল কেন সেই সুর?

এক সময়ের জনপ্রিয় ‘ফ্যাশন’ সংগীত এখন যেন অনেকটাই অতীত। সত্তরের দশকে ‘ফ্যাঙ্ক’ (Funk) সঙ্গীতের সোনালী সময়ে, যখন মারকাস মিলারের মতো শিল্পীরা সঙ্গীতের জগতে আলোড়ন তুলেছিলেন, সেই সময়ের গানগুলো মানুষের মনে অন্যরকম উন্মাদনা তৈরি করত।

মাইকেল জ্যাকসন, চাক্কা খান কিংবা লুথার ভ্যান্ড্রসের মতো শিল্পীদের গানেও এই ‘ফ্যাঙ্ক’ এর ছোঁয়া ছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফ্যাঙ্ক’ সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। কারণ, এই সঙ্গীতের সঙ্গে মিশে ছিল একটা সময়ের সংস্কৃতি, যা ছিল আনন্দ আর মিলনের প্রতীক।

“উই ওয়ান্ট দ্য ফ্যাঙ্ক!” (We Want the Funk!) নামে একটি নতুন তথ্যচিত্র সেই সময়ের কথা তুলে ধরেছে। যেখানে জেমস ব্রাউন, জর্জ ক্লিনটনের মতো শিল্পীদের কাজ এবং ফ্যাঙ্ক সঙ্গীতের বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

জেমস ব্রাউন, যিনি “ফ্যাঙ্ক”-এর ডক্টরেট ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচিত, তাঁর “আই গট ইউ (আই ফিল গুড)” এবং “পাপাস গট আ ব্র্যান্ড নিউ ব্যাগ”-এর মতো গানগুলো এই ধারার সঙ্গীতের জন্ম দিয়েছিল।

‘ফ্যাঙ্ক’ সঙ্গীত ছিল কমিউনিটির গান। এর প্রধান আকর্ষণ ছিল দলবদ্ধতা।

“ফ্যাঙ্ক”-এর বড় শিল্পীগোষ্ঠীগুলো একসঙ্গে কাজ করতেন। মারকাস মিলার যেমনটা বলছিলেন, “ফ্যাঙ্ক-এর গানগুলো দুঃখের হয় না, বরং মানুষকে নাচতে ও আনন্দ করতে উৎসাহিত করে।”

এই সঙ্গীতের মূল সুর ছিল দলবদ্ধভাবে কাজ করা, যা একটি বাস্কেটবল টিমের মতো। সবাই তাদের ভূমিকা ভালোভাবে পালন করে, এবং নিজেদের মধ্যেকার সমস্যাগুলো মিটিয়ে নেয়।

‘ফ্যাঙ্ক’ সঙ্গীতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল এর মধ্যেকার বর্ণগত ঐক্য। শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীদের একসঙ্গে কাজ করাটা ছিল চোখে পড়ার মতো।

স্লি অ্যান্ড দ্য ফ্যামিলি স্টোন-এর মতো ব্যান্ডগুলো শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ এবং বাদামী চামড়ার মানুষগুলোকে একত্রিত করে গান পরিবেশন করত।

তবে আশির দশকে হিপ-হপ, গ্রাঞ্জ, এবং বিকল্প রক সঙ্গীতের উত্থান হয়, যা ‘ফ্যাঙ্ক’-এর জনপ্রিয়তাকে কমিয়ে দেয়। প্রযুক্তি এবং বাজারের কারণেও অনেক ব্যান্ড টিকতে পারেনি।

রেকর্ড কোম্পানিগুলো এখন একক শিল্পীদের ওপর বেশি মনোযোগ দেয়, কারণ এটি তাদের জন্য লাভজনক।

বর্তমানে, আধুনিক পপ সঙ্গীতে সেই পুরনো ‘ফ্যাঙ্ক’-এর সুর খুঁজে পাওয়া কঠিন। ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে সঙ্গীত তৈরি আরও সহজ হয়ে গেছে, কিন্তু সেই সঙ্গীতের মধ্যে কমিউনিটির অনুভূতিটা যেন হারিয়ে গেছে।

‘ফ্যাঙ্ক’-এর এই আবেদন আজও বিদ্যমান। ইউটিউবে পুরনো কনসার্টের ভিডিওগুলোতে এখনো মিলিয়ন ভিউ হয়।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও এই সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। “আপটাউন ফ্যাঙ্ক” (Uptown Funk)-এর মতো কিছু গান এখনো জনপ্রিয়, যা ‘ফ্যাঙ্ক’-এর প্রভাবের প্রমাণ।

বর্তমানে ‘ফ্যাঙ্ক’ সঙ্গীতের সেই সোনালী দিন হয়তো আর নেই, কিন্তু এর আবেদন এখনো মানুষের মনে গেঁথে আছে।

কারণ, সঙ্গীতের মাধ্যমে একসঙ্গে আনন্দ করার যে আকাঙ্ক্ষা, তা মানুষের চিরন্তন এক অনুভূতি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *