আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা: চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব, বাংলাদেশের প্রস্তুতি?
গত কয়েক দিন ধরেই বিশ্ব অর্থনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ। দুই পরাশক্তির মধ্যে শুল্ক বৃদ্ধি ও পাল্টা পদক্ষেপের কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে এই যুদ্ধের প্রভাব থেকে বাঁচাতে কৌশল তৈরি করতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশ্লেষকরাও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিষয়টিকে, কারণ এর সম্ভাব্য প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক (শুল্ক – Tariff) আরও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের আচরণ আলোচনার আগ্রহের পরিবর্তে এক ধরনের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের (blackmailing) শামিল।
এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনৈতিক সুরক্ষার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। জাপান, ভারতের মতো দেশগুলো ইতোমধ্যে তাদের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং বাণিজ্য যুদ্ধের ক্ষতি কমাতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে।
মালয়েশিয়া “নরম কূটনীতি”র মাধ্যমে আলোচনার কথা বলছে এবং নিজেদের বাণিজ্যকে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার চেষ্টা করছে। হংকংও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নাও পড়তে পারে, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর কিছু প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বিকল্প বাজার অনুসন্ধান, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এবং স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তবে, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের উচিত হবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস