**ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি : প্রযুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা বাংলাদেশের জন্য একটি বিশ্লেষণ**
বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা এআই) প্রযুক্তির অগ্রগতি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। উন্নত দেশগুলো এই খাতে বিপুল বিনিয়োগ করছে এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের পুরনো ধ্যান-ধারণা, বিশেষ করে শিল্পখাতকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
এর ফলে চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে এআই-এর দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়তে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে শুল্ক বৃদ্ধি, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে (manufacturing sector) শক্তিশালী করতে চাইছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ প্রযুক্তিগত অগ্রগতির যুগে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।
এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, শুল্কের কারণে প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ কমে যেতে পারে, যা এআই-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে পিছিয়ে পড়ার কারণ হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার যদিও এআই-এর গুরুত্ব স্বীকার করে এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, তবে কিছু নীতি এক্ষেত্রে বিপরীত ফল দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হার্ভার্ড, ব্রাউন ও প্রিন্সটনের মতো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে অর্থায়ন স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়াও, ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকশ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের পদক্ষেপ এআই-এর গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় মেধাবী জনশক্তির সরবরাহ কমিয়ে দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সত্তরের দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতে কর্মী সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করে। এরপর শতাব্দীর শুরুতে এই পতন আরও দ্রুত হয়।
গবেষকদের মতে, এর প্রধান কারণ ছিল বিশ্বায়ন, অবাধ বাণিজ্য এবং স্বয়ংক্রিয়তা (automation)। অন্যদিকে, অর্থনীতিতে পরিষেবা খাতের (services sector) গুরুত্ব বেড়েছে, যেখানে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (World Economic Forum) মতে, ভবিষ্যতের চাকরির বাজার মূলত এআই-এর মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর নির্ভরশীল হবে, উৎপাদন খাতের ওপর নয়।
অন্যদিকে, ট্রাম্প পুরনো দিনের উৎপাদন নির্ভর অর্থনীতিতে ফিরতে চাইছেন। এর জন্য তিনি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন, যা বিশেষজ্ঞদের মতে ১৯৩০ সালের স্মুট-হাওলি আইনের (Smoot-Hawley Act) পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।
সেই সময় এই আইনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছিল এবং বিশ্বজুড়ে মহামন্দা আরও গভীর হয়েছিল।
বর্তমানে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত। বিশ্বজুড়ে বাজারের অস্থিরতাও বাড়ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির উপর শুল্কের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি এই শুল্কগুলো বহাল থাকে, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা (recession) ডেকে আনতে পারে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
এর ফলে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ (stagflation) দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে পিছিয়ে পড়লে তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এআই প্রযুক্তির অগ্রগতি শুধু উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হবে, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির গতিপথ পরিবর্তন করবে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এআই-এর ব্যবহার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে উন্নতি আনতে পারে। তাই, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে পিছিয়ে পড়লে বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।
এআই প্রযুক্তি বিশ্বকে নতুনভাবে সাজাচ্ছে, মানুষের কাজ করার ধরন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনছে। এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এআই-এর দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে, তবে এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
তাই, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো এক্ষেত্রে নতুন করে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন