মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা: শুল্ক যুদ্ধের ছায়া ও বাংলাদেশের অর্থনীতি। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলি যখন শুল্ক যুদ্ধের কারণে টালমাটাল, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারেও দেখা যাচ্ছে অস্থিরতা।
গত কয়েক দিনের পতনের পর, মঙ্গলবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার, তবে এই উত্থান কত দিন স্থায়ী হবে, তা বলা কঠিন। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
**শুল্ক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট**
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি, বিশেষ করে চীন ও অন্যান্য দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা (recession) আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হতে পারে। শুধু তাই নয়, এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।
সোমবার পর্যন্ত টানা দরপতনের পর, মঙ্গলবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার। ডাউ জোন্স ফিউচার ১.৮ শতাংশ, এস&পি ৫০০ ফিউচার ১.৩ শতাংশ এবং নাসডাক ফিউচার ১ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা হয়তো এই দর পতনের সুযোগে শেয়ার কিনেছেন। তবে, এই উত্থান কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করা প্রায় সব পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি দেশের ওপর এই শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি চীনের ক্ষেত্রে এই শুল্ক ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারেন ট্রাম্প। চীনও এর জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
**বিশেষজ্ঞদের মতামত**
এই বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, তা শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গোল্ডম্যান স্যাকস এবং জেপি মর্গান চেজের মতো বড় ব্যাংকগুলোও একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের কেউ কেউ এই পরিস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে। এমনকি, ডাউ জোন্স সূচক ৫০,০০০-এ পৌঁছানোরও ভবিষ্যদ্বাণী করছেন তারা।
অন্যদিকে, জেপি মর্গান চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) জ্যামি ডিমন সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি পণ্যের দাম বাড়াবে, বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমিয়ে দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দুর্বল করবে।
**বৈশ্বিক বাজারের চিত্র**
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের পাশাপাশি, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারেও মঙ্গলবার ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ৬ শতাংশ বেড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি ০.৩ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০ সূচক ২.৩ শতাংশ বেড়েছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকও প্রায় ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপের বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে।
**বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব**
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটালের কারণে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, বৈদেশিক বিনিয়োগেও কিছুটা ভাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব বাজারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তাই, আন্তর্জাতিক বাজারে যেকোনো ধরনের অস্থিরতা আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে, এই পরিস্থিতিতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।