ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি: একদিকে যেমন বিতর্ক, তেমনই প্রশ্ন উঠছে এর কার্যকারিতা নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ১৮০টির বেশি দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এটিকে ‘পাল্টা শুল্ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর অন্য দেশগুলোর উচ্চ শুল্কের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের যুক্তি, এই পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সঠিক পথে আনবে, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছেন।
তবে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কিছু দিক বেশ অদ্ভুত। তালিকায় এমন কিছু দ্বীপ ও অঞ্চলের নাম রয়েছে, যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য খুবই সামান্য। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যে দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (trade surplus) বজায় রেখেছে, তাদেরও এই শুল্কের আওতায় আনা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নির্ধারণের কৌশল নিয়ে। অনেক দেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আসলে, ট্রাম্প প্রশাসন কিভাবে এই ‘পাল্টা শুল্ক’ নির্ধারণ করছে? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোনো দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি (trade deficit) হিসাব করে, সেই ঘাটতিকে ওই দেশ থেকে আসা মোট আমদানির দ্বিগুণ পরিমাণ দিয়ে ভাগ করা হচ্ছে।
এরপর, এই ভাগফলকে ১০০ দিয়ে গুণ করে শুল্কের হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতি হলো, যখন কোনো দেশের আমদানি, রপ্তানির চেয়ে বেশি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি হয় ১০০ বিলিয়ন ডলার, আর সেই দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হয় ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, তাহলে শুল্কের হার হবে ২৫ শতাংশ।
কিন্তু এই হিসাবের মধ্যেও রয়েছে কিছু অসামঞ্জস্যতা। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বজায় রেখেছে, তাদেরও শুল্কের আওতায় আনা হয়েছে।
যেমন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোর কথা বলা যায়।
এই তালিকায় সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, কিছু জনশূন্য দ্বীপ ও অঞ্চলের নাম। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্টার্কটিকার কাছে অবস্থিত হিয়ার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপপুঞ্জের কথা বলা যায়।
এখানে মানুষের বসতি নেই, বরং রয়েছে সিল, পেঙ্গুইন এবং বিভিন্ন পাখির আবাস। জানা গেছে, এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সামান্য কিছু ইলেক্ট্রনিক পণ্য ও যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার অন্তর্ভুক্ত নরফোক দ্বীপও ট্রাম্পের শুল্কের শিকার হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপে প্রায় ২ হাজার মানুষের বাস।
এখানকার উৎপাদিত কিছু রাসায়নিক দ্রব্যও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের আওতায় এসেছে। এছাড়া, কোকোস (কিলিং) দ্বীপপুঞ্জ, ক্রিসমাস দ্বীপ এবং টোকেলাউয়ের মতো অঞ্চলের ওপরও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি আসলে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেয়েও বেশি কিছু। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করা এবং আলোচনার টেবিলে অন্য দেশগুলোকে আনা।
তারা মনে করেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শিল্পখাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে। তবে, এর ফলস্বরূপ বিশ্ব বাণিজ্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই শুল্ক ঘোষণার পর ৫০টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
তবে, আলোচনার বিষয়বস্তু এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, শুল্কগুলো মূলত বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই পারস্পরিকতার নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এই ঘটনাগুলো বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নিজেদের বাণিজ্য নীতি এবং কৌশল নতুন করে সাজানো জরুরি।
তথ্য সূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।