মার্কিন শুল্ক: চীনের পথে নয়, ভিন্ন পথে হাঁটছে এই প্রভাবশালী দেশ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান : বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা?

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি।

এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, যেখানে চীনসহ অন্যান্য দেশগুলো প্রতিরোধের পথে হাঁটছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডুক-সু সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেন।

তিনি উল্লেখ করেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন এবং এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করবেন। হান মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধের রাস্তায় হাঁটা ফলপ্রসূ হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতির কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কারণ, স্যামসাং, এলজি এবং হুন্দাইয়ের মতো কোরিয়ান ব্র্যান্ডগুলো আমেরিকান বাজারে বেশ পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোরিয়ার রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিতে পারে।

হান ডুক-সুর মতে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ঠান্ডা মাথায় পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে একটি ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি তৈরি করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ১৯৩০-এর দশকে যখন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বৃদ্ধি করেছিল, তখন বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তেমন পরিস্থিতি তৈরির কোনো সুযোগ নেই।

এই পরিস্থিতিতে চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ কঠোর। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গীকার করেছে।

অন্যদিকে, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্ব একটি নতুন, আরও অস্থির বাণিজ্য যুগে প্রবেশ করছে।

দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।

গত বছর দেশ দুটির মধ্যে ১৯ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা হয়েছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা গেছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য এই পরিস্থিতি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।

তবে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ হওয়ায়, তিনি মনে করেন আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।

এই ঘটনার আলোকে, বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো— আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে আলোচনা ও পারস্পরিক সমঝোতার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের অর্থনীতিও বিশ্ব বাজারের সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে।

তাই বিশ্ব অর্থনীতির যেকোনো পরিবর্তনে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *