বর্তমানে চাকরির বাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর ব্যবহার বাড়ছে, বিশেষ করে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে। উন্নত বিশ্বে এর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হলেও, বাংলাদেশেও এর প্রভাব বাড়ছে, যা চাকরি প্রার্থীদের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে।
আপনার জীবনবৃত্তান্ত (CV) বা চাকরির আবেদনপত্রটি একজন মানুষের পরিবর্তে সম্ভবত প্রথমে AI-এর মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তাহলে, এই পরিবর্তনের সঙ্গে কিভাবে মানিয়ে নেবেন, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
বর্তমানে, বিভিন্ন কোম্পানিতে, বিশেষ করে যেখানে প্রচুর সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে, সেখানে কর্মী নিয়োগের প্রাথমিক পর্যায়ে AI ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। এর কারণ হল, AI খুব দ্রুত আবেদনপত্রগুলো যাচাই করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারে, যা একজন মানুষের পক্ষে সময়সাপেক্ষ।
উদাহরণস্বরূপ, একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়লে, AI সেই আবেদনগুলো থেকে উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারে।
আসলে, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে AI ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হল সময় বাঁচানো এবং সঠিক প্রার্থী খুঁজে বের করা। AI, জীবনবৃত্তান্তের (CV) শব্দ বিশ্লেষণ করে প্রার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতার ধারণা পেতে পারে।
শুধু তাই নয়, কিছু AI সিস্টেম প্রার্থীর সামগ্রিক প্রোফাইল তৈরি করতে সক্ষম, যা নিয়োগকারীদের জন্য একটি সম্পূর্ণ চিত্র সরবরাহ করে। এর ফলে, নিয়োগকারীরা দ্রুত উপযুক্ত প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করতে পারে।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আপনার আবেদনপত্রটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে। বরং, AI-এর মাধ্যমে স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াটি আরও সুসংগঠিত হতে পারে।
কারণ, AI নির্দিষ্ট কিছু শব্দ বা কীওয়ার্ডের উপর নির্ভর না করে প্রার্থীর সামগ্রিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করতে পারে। তাই, আপনি যদি আপনার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, তাহলে AI-এর নজরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
চাকরির জন্য আবেদন করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার। আপনার জীবনবৃত্তান্তে (CV) কাজের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী আপনার দক্ষতাগুলো উল্লেখ করুন।
এছাড়াও, আকর্ষণীয় করার জন্য অতিরিক্ত ডিজাইন বা চার্ট ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। কারণ, AI সিস্টেমগুলো সাধারণত সহজ এবং সুস্পষ্ট বিন্যাস পছন্দ করে।
বর্তমানে, LinkedIn-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোও কর্মী নিয়োগের জন্য AI ব্যবহার করছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘Hiring Assistant’ নামের একটি AI টুল ব্যবহার করে, নিয়োগকারীরা খুব সহজে উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে বের করতে পারেন।
এই টুল প্রার্থীর প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে, তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করে। এমনকি, এই টুল আবেদনকারীর সঙ্গে চ্যাটও করতে পারে।
তবে, AI ব্যবহারের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এটি এখনো নির্ভুল নয় এবং মাঝে মাঝে ভুল তথ্য দিতে পারে। এছাড়া, AI-এর মধ্যে পক্ষপাতিত্ব থাকারও সম্ভাবনা থাকে।
তাই, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন মানুষের তত্ত্বাবধান প্রয়োজন।
পরিশেষে, এ কথা বলা যায় যে, AI প্রযুক্তি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, একজন চাকরিপ্রার্থীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তার দক্ষতা এবং যোগ্যতাকে সঠিকভাবে তুলে ধরা।
তথ্য সূত্র: CNN