যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি পর্যটকদের আগমন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, যা দেশটির পর্যটন খাতে এক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, অনেকে এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করছেন।
পর্যটন বিশেষজ্ঞরা একে ‘ট্রাম্প যুগ’-এর কারণে পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়া হিসেবে দেখছেন।
পর্যটন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘ট্যুরিজম ইকোনমিক্স’-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমন প্রায় ৯.৪ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে, যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল, সেখানে এই পতন বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
বিভিন্ন কারণের মধ্যে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে শুল্ক বৃদ্ধি এবং তাঁর রাজনৈতিক মন্তব্য অনেক দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এর ফলস্বরূপ, অনেক বিদেশি নাগরিক এখন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন এবং বিকল্প গন্তব্য হিসেবে ইউরোপের দেশগুলোকে বেছে নিচ্ছেন।
উদাহরণস্বরূপ, সুইডেন থেকে ডেনভারে ভ্রমণে আসা একদল পর্যটকের কথা জানা যায়। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের পরিকল্পনা করলেও ট্রাম্পের একটি মন্তব্যের কারণে তাঁদের ভ্রমণ বাতিল করতে বাধ্য হন।
শুধু তাই নয়, কানাডার নাগরিকদের মধ্যেও ট্রাম্পের প্রতি অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, কারণ তিনি একাধিকবার কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকদের জন্য বৃহত্তম উৎস ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কানাডিয়ান পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
ফ্লাইট সেন্টার ট্র্যাভেল গ্রুপ কানাডা-এর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে অবকাশ যাপনের জন্য বুকিং গত বছরের মার্চের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমেছে।
এছাড়াও, মেক্সিকো থেকে আকাশপথে ভ্রমণ করা পর্যটকদের সংখ্যাও ২৩ শতাংশ কমেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে আসা বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা ১১.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। শুধু আকাশপথেই নয়, স্থলপথে মেক্সিকো থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যাও কমেছে।
পর্যটন খাতের এই মন্দা দেশের অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কম আগমনের কারণে এই বছর যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব হারাতে পারে।
চীনের পর্যটকদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। চীনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের আগ্রহ কমেছে, বিশেষ করে বিনোদনমূলক ভ্রমণ, যেমন—ডিজনিল্যান্ড, হাওয়াই এবং নিউইয়র্কে ভ্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
পর্যটন গবেষণা সংস্থা চায়না আউটবাউন্ড ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উলফগ্যাং জর্জি আর্ল্ট এই পরিস্থিতিকে ‘ট্রাম্প স্ল্যাম্প’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তবে, সব পর্যটকের আগ্রহ হারানোর পেছনে কেবল রাজনৈতিক কারণই দায়ী নয়। জাপানের পর্যটকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আকর্ষণ কমে যাওয়ার পেছনে বিনিময় হার একটি বড় কারণ।
বর্তমানে, অনেক জাপানি পর্যটক এমন গন্তব্য পছন্দ করছেন যেখানে মুদ্রা বিনিময় হারের প্রভাব কম।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পর্যটন সংকট নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, এবং এর পতনের কারণগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কেমন দাঁড়ায়, সেদিকেই এখন সকলের দৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।