থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রকে অবমাননার অভিযোগে এক মার্কিন শিক্ষাবিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির কঠোর রাজদ্রোহ আইনের অধীনে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা বিদেশি নাগরিকের ক্ষেত্রে খুবই বিরল। আটককৃত ব্যক্তির নাম পল চেম্বার্স, যিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক এবং গণতন্ত্র বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, চেম্বার্সকে জামিন দেওয়া হয়নি এবং বর্তমানে উত্তর থাইল্যান্ডের ফিতসানুলোক প্রদেশের কারাগারে রাখা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে থাই দণ্ডবিধির ১১২ ধারা এবং কম্পিউটার ক্রাইম আইনের ১৪ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। থাইল্যান্ডের এই ১১২ ধারা দেশটির রাজদ্রোহ আইন হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগের কারণ হিসেবে জানা যায়, একটি ওয়েবিনারের আমন্ত্রণপত্র, যার শিরোনাম ছিল: “থাইল্যান্ডের ২০২৪ সালের সামরিক ও পুলিশ পুনর্গঠন: এর মানে কী?” এই আমন্ত্রণপত্রটি সিঙ্গাপুরে অবস্থিত ‘আইসিয়াস – ইউসুফ ইসহাক ইনস্টিটিউট’-এর ওয়েবসাইটে অক্টোবর ২০২৪-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
চেম্বাসের আইনজীবী সংস্থা ‘থাই ল’য়ার্স ফর হিউম্যান রাইটস’-এর আকরচাই চাইমানেকেরাকাতে জানিয়েছেন, “চেম্বার্স তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে কোনো লেখা লেখেননি বা প্রকাশও করেননি।” জানা গেছে, চেম্বার্স আদালতের জামিন খারিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছেন।
থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রকে অবমাননা করা হলে, দেশটির কঠোর আইন অনুযায়ী, ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এমনকি, একাধিক অভিযোগের ক্ষেত্রে কয়েক দশক পর্যন্ত কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, রাজপরিবার সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য এক ব্যক্তিকে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের জেরে অন্তত ২৭৭ জনের বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছে। রাজনৈতিক ভাষণ, রাজপরিবারের সদস্যদের মতো পোশাক পরা বা ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহ আইনের প্রয়োগ খুবই বিরল। পল চেম্বার্স একজন সুপরিচিত শিক্ষাবিদ এবং তিনি উত্তর থাইল্যান্ডের নারেসুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। একই সঙ্গে তিনি ‘আইসিয়াস – ইউসুফ ইসহাক ইনস্টিটিউট’-এর ভিজিটিং ফেলো হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
চেম্বাসের আইনজীবীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশি তদন্তের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়েবিনারের আমন্ত্রণপত্রে দেওয়া তথ্য মিথ্যা ছিল। কারণ, রাজা সামরিক বাহিনী পুনর্গঠন বা উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেননি। এমন মন্তব্য রাজার প্রতি অবমাননাকর এবং তাঁর সম্মান ও মর্যাদাহানি করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর থাইল্যান্ড বিষয়ক গবেষক সুনাই ফাসুক বলেছেন, “থাইল্যান্ডে রাজদ্রোহ আইনের অপব্যবহার মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। বিশিষ্ট থাই স্টাডিজ পণ্ডিত পল চেম্বার্সের বিরুদ্ধে রাজতন্ত্র এবং সামরিক বাহিনী সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য এই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে থাইল্যান্ডে শিক্ষাগত স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান