যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতিতে আবারও অস্থিরতা, শুল্ক নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হোয়াইট হাউস
ওয়াশিংটন ডিসি, [আজকের তারিখ]। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতিতে, হোয়াইট হাউস থেকে আসা পরস্পরবিরোধী বার্তায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বুধবার থেকে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
এই শুল্কগুলো কি শুধুমাত্র দর কষাকষির কৌশল, নাকি বিশ্ব অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর চূড়ান্ত পদক্ষেপ? এমন প্রশ্নে যখন বিশ্বজুড়ে জল্পনা তুঙ্গে, তখন ট্রাম্পের বক্তব্যে সেই ধোঁয়াশা আরও বেড়েছে। তিনি বলছেন, শুল্ক যেমন স্থায়ী হতে পারে, তেমনি আলোচনার মাধ্যমে এর পরিবর্তনও সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণে দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা কমতে পারে। কারণ, তিনি একসময় সমৃদ্ধ অর্থনীতি এবং কর হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা এখন অনেকের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। বিশেষ করে, শেয়ার বাজার যখন টালমাটাল, তখন এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন সিনেটর থম টিলিস হোয়াইট হাউসকে দ্রুত এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্তের শেষ পরিণতি কী, সে সম্পর্কে ধারণা থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” একই সঙ্গে, ডেমোক্রেট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ট্রাম্পের এই নীতির সমালোচনা করে বলেছেন, “এই ধরনের নীতির কারণে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে যায়।”
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার সকালে তাঁর টিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্য কী, সে বিষয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। শুধু বলা হয়েছে, আলোচনা কয়েক মাস ধরে চলতে পারে এবং দেশগুলোকে তাদের কর ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হতে পারে।
ট্রাম্প প্রায়ই বলে আসছেন যে, তিনি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান। তিনি মনে করেন, অন্যান্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি পণ্য কিনলেও, তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য সেভাবে বিক্রি করে না, যা বাণিজ্য ঘাটতির প্রধান কারণ। সম্প্রতি তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও কথা বলেছেন এবং দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কথা বলেন, তখন ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ছিল কিছুটা ভিন্ন। তিনি ইসরায়েলের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই শুল্ককে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেন এবং অন্যান্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে বলে মনে করেন।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হাসেট এবং ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, অনেক দেশ এরই মধ্যে শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে। বেসেন্ট বলেছেন, “এপ্রিল, মে, এমনকি জুন মাস পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হবে।”
অন্যদিকে, রিপাবলিকান সিনেটর জন কেনেডি মনে করেন, ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের কিছু পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কারণে এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তিনি তাঁর রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে পারছেন এবং তাঁদের উদ্বেগের কোনো সমাধান দিতে পারছেন না।
চীনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প আরও বেশি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। যদিও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে, তবে বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
লুইজিয়ানার হাউজ স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, আমেরিকানরা জানে যে ট্রাম্প বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করার চেষ্টা করছেন এবং তিনি প্রেসিডেন্টের ওপর আস্থা রাখেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস