যুক্তরাজ্যে ‘খুনি শনাক্তকরণ’ প্রকল্প: ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম।
যুক্তরাজ্যের বিচার মন্ত্রণালয় (Ministry of Justice – MoJ) একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য খুনীদের চিহ্নিত করা।
কর্মকর্তারা বলছেন, এর মাধ্যমে জনসাধারণের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পদক্ষেপকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে, কর্তৃপক্ষ কয়েক হাজার মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করবে। এর মধ্যে রয়েছে অপরাধের শিকার ব্যক্তি, গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার, এবং আগে অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল এমন ব্যক্তিদের ডেটা।
এই ডেটা সংগ্রহ করা হবে প্রোবেশন সার্ভিস (Probation Service) এবং গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশের কাছ থেকে। এইসব তথ্যের মধ্যে থাকবে নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, জাতিগত পরিচয়, এবং পুলিশের কাছে তাদের প্রথম পরিচিতি সম্পর্কিত তথ্য।
এমনকি মানসিক স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি, আত্মহত্যার প্রবণতা এবং অক্ষমতা সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্যও বিশ্লেষণ করা হবে।
সরকারের ভাষ্যমতে, এই প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল গবেষণা করা। বর্তমানে এই কাজটি শুধুমাত্র গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে।
বিচার মন্ত্রণালয় বলছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁরা এমন কিছু বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে চান, যা একজন ব্যক্তিকে খুনের মতো অপরাধ করতে উৎসাহিত করে।
এর ফলে ভবিষ্যতে গুরুতর অপরাধের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই ধরনের ডেটা ব্যবহারের ফলে সংখ্যালঘু এবং দরিদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি বৈষম্য তৈরি হতে পারে। কারণ, ডেটা বিশ্লেষণের অ্যালগরিদমগুলো (algorithms) অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থা ‘স্টেটওয়াচ’-এর গবেষক সোফিয়া লিয়াল (Sofia Lyall) এই প্রকল্পের সমালোচনা করে বলেছেন, “এই ধরনের ‘খুনি শনাক্তকরণ’ ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা গভীর উদ্বেগের বিষয়। এর মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য আরও বাড়বে।”
এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি হল, এটি এমন ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত করবে, যাদের কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, কিন্তু পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। এছাড়াও, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবেদনশীল তথ্য ব্যবহারের বিষয়টিও গুরুতর উদ্বেগের কারণ।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পের ডেটা শুধুমাত্র গবেষণা কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে। ভবিষ্যতে এই গবেষণার ফল প্রকাশ করা হবে।
তবে সমালোচকদের আশঙ্কা, এই ধরনের ডেটা ব্যবহারের ফলে ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে এবং সমাজে ভীতি তৈরি হতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান