ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সম্প্রতি মার্কিন বার্বন হুইস্কির ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বাতিল করেছে। এই সিদ্ধান্তটি মূলত নেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায়।
তবে, ইইউ’র এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা কিছুটা হলেও কমিয়েছে।
জানা গেছে, ইউরোপের বিভিন্ন মদ্য প্রস্তুতকারক দেশগুলোর তীব্র আপত্তির কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ইতালির মতো দেশগুলো আশঙ্কা করছিল, এমন পদক্ষেপ তাদের নিজস্ব মদ্য শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হবে।
কারণ, বার্বন এবং অন্যান্য মার্কিন হুইস্কির ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে, এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তাদের উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শুরুতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ছিল। এই তালিকায় বার্বন এবং ওয়াইনের নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কিন্তু পরে, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আলোচনার পর তালিকা থেকে এই দুটি পণ্য বাদ দেওয়া হয়। জানা যায়, এই সিদ্ধান্তের ফলে ২১ বিলিয়ন ইউরোর (ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে যা প্রায় ২,৪০০ বিলিয়ন টাকার বেশি) পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা আগে ২৬ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ৩,০০০ বিলিয়ন টাকার বেশি) কথা ভাবা হয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে এক টুইট বার্তায় ফ্রান্স ও অন্যান্য ইইউভুক্ত দেশ থেকে আসা ওয়াইন, শ্যাম্পেন ও অ্যালকোহল জাতীয় পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। ফ্রান্স সরকারও যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা বলেছিল, কারণ তাদের মদ্যশিল্প এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এক বিবৃতিতে জানান, বার্বনের ওপর শুল্ক আরোপের কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু এই প্রস্তাবকে ‘ভুল পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেন।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক আরোপের এই ঘটনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করতে পারতো। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর মধ্যে মদ ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর শুল্ক প্রায় তুলে দেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ৪৫০ শতাংশ বেড়েছিল, যা ২০১৮ সালে ৬.৭ বিলিয়ন ইউরোতে (প্রায় ৭০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পৌঁছেছিল।
এই পরিস্থিতিতে, আয়ারল্যান্ড আশঙ্কা করেছিল, ট্রাম্পের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ তাদের বিশাল হুইস্কি শিল্পকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর পরিমাণে বার্বন ও অন্যান্য অ্যালকোহল জাতীয় পণ্য আমদানি করে।
শুধু তাই নয়, তাদের উৎপাদিত হুইস্কি রপ্তানির বাজারও যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিগুলি বিশ্ব অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলে। বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশ একটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান