মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন তৈরি হলে দাম কত হবে? শুনে চমকে যাবেন!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যদি আইফোন তৈরি হয়, তাহলে তার দাম তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে যে আইফোনের দাম এক হাজার ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা), সেটি তৈরি করতে খরচ হতে পারে প্রায় ৩,৫০০ ডলার (প্রায় ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা)। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ করে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।

তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে, তিনি চেয়েছিলেন বিভিন্ন কারখানা এবং কর্মসংস্থানগুলো যেন আমেরিকায় ফিরে আসে। এর ফলস্বরূপ পোশাক থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যার প্রভাব সরাসরি পড়বে আমেরিকান ভোক্তাদের উপর।

ওয়েডবুশ সিকিউরিটির প্রযুক্তি গবেষণা বিভাগের প্রধান ড্যান আইভস সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন তৈরি করা হলে বর্তমান দামের তুলনায় তা অনেক বেশি হবে।

এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে আইফোনের উৎপাদন ব্যবস্থা এশিয়ায় কেন্দ্রীভূত এবং অত্যন্ত জটিল। সেই উৎপাদন ব্যবস্থা আমেরিকায় তৈরি করতে অনেক বেশি খরচ হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া এবং নিউ জার্সির মতো রাজ্যে যদি চিপ তৈরির কারখানা তৈরি করা হয়, তবে একটি আইফোনের দাম ৩,৫০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।

আইভেস আরও জানান, অ্যাপলের জন্য তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলের মাত্র ১০ শতাংশ আমেরিকাতে সরিয়ে নিতেও প্রায় তিন বছর সময় লাগবে এবং খরচ হবে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার।

এই সিদ্ধান্তের ফলে অ্যাপলের শেয়ারের দামে ইতোমধ্যে প্রভাব পড়েছে।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে অ্যাপলের শেয়ারের মূল্য প্রায় ২৫ শতাংশ কমে গেছে। কারণ আইফোনের যন্ত্রাংশ তৈরি এবং অ্যাসেম্বলিংয়ের জন্য চীন ও তাইওয়ানের উপর অ্যাপল বিশেষভাবে নির্ভরশীল।

বর্তমানে আইফোনের যন্ত্রাংশ তাইওয়ানে তৈরি হয়, স্ক্রিন প্যানেল সরবরাহ করে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো।

কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি হয় চীনে এবং চূড়ান্ত অ্যাসেম্বলিংও হয় সেখানেই।

তবে, অ্যাপল এরই মধ্যে চীনের বাইরে উৎপাদন ব্যবস্থা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে।

তারা আগামী চার বছরে আমেরিকায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এর পাশাপাশি, তারা ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোতেও উৎপাদন স্থানান্তরের কথা ভাবছে, যেখানে শুল্কের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম।

ভারতে বর্তমানে ২৬ শতাংশ এবং ব্রাজিলে ১০ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরবরাহ শৃঙ্খল অপরিবর্তিত থাকলেও আইফোনের দাম বাড়তে পারে।

নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক, রোজেনব্লাট সিকিউরিটির মতে, যদি অ্যাপল শুল্কের পুরো খরচ ভোক্তাদের উপর চাপিয়ে দেয়, তাহলে আইফোনের দাম প্রায় ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট নীল শাহ্-এর মতে, দাম প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা নির্ভর করবে ফোনগুলো কোথায় তৈরি হচ্ছে তার ওপর।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের বাজারে আইফোনের দামের উপরও প্রভাব পড়তে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের ফলে, আমদানি করা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দামেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *