আমি এখনো অসুস্থ, তবুও আমার শরীর নিয়ে আমি গর্বিত!

শিরোনাম: শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সমাজে উজ্জ্বল নারীদের জয়যাত্রা: ফ্রান্সেস রায়ানের অভিজ্ঞতা

শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে সমাজে নারীদের অভিজ্ঞতা কেমন? তাদের পথচলার বাঁকগুলো কি সবসময় মসৃণ হয়? সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লেখিকা ফ্রান্সেস রায়ান, যিনি নিজেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করেছেন। ব্রিটেনের প্রেক্ষাপটে নারীদের প্রতিবন্ধকতা এবং সমাজে তাদের অবস্থান নিয়ে তিনি তার নিজস্ব মতামত দিয়েছেন।

ফ্রান্সেস রায়ানের মতে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে ওঠা নারীদের পথচলা সহজ নয়। ছোটবেলা থেকেই তাদের সমাজের নানান প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। এই নারীদের প্রতিনিয়ত বোঝানো হয় যে তাদের শরীর সমাজের স্বাভাবিক মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ নয়। বিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে কর্মজীবন কিংবা সামাজিক সম্পর্ক—সবক্ষেত্রেই তাদের প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়।

ফ্রান্সেস রায়ান তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, সাধারণ ফ্লু থেকে জটিলতার কারণে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে তার শারীরিক ক্ষমতা কমতে থাকে এবং জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিছানাবন্দী ছিলেন। সেই সময়ে তিনি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি মানুষের ধারণার সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি উপলব্ধি করেন, সমাজের কাঠামো এখনো অনেক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী নয়।

এই লেখিকা উল্লেখ করেন, ব্রিটেনে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য উপযুক্ত সুযোগের অভাব রয়েছে। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত, সরকারি সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল এবং অনেক সময় তারা বৈষম্যের শিকার হন। ফ্রান্সেস রায়ানের মতে, এই সমস্যাগুলো শুধু অবকাঠামোগত নয়, বরং মানসিকতা এবং উপলব্ধিরও।

ফ্রান্সেস রায়ান তার লেখায় বিশেষভাবে সক্ষম নারীদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, সমাজের মূল স্রোতে এখনো তাদের উপস্থিতি কম। তবে, তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন এবং নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি গ্রেটা থুনবার্গ, বিলি আইলিশ, সেলিনা গোমেজ ও লেডি গাগার মতো বিখ্যাত নারীদের কথা উল্লেখ করেছেন।

ফ্রান্সেস রায়ানের মতে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও একজন নারী সুখী ও সফল হতে পারেন। সমাজের প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের পথ তৈরি করার গুরুত্ব তিনি তুলে ধরেন। তিনি তার নতুন বই ‘হু ওয়ান্টস নরমাল?’-এর মাধ্যমে বিশেষভাবে সক্ষম নারীদের জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন, যা সমাজে তাদের সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করবে।

এই নিবন্ধের মাধ্যমে ফ্রান্সেস রায়ান বিশেষভাবে সক্ষম নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের পাশাপাশি তাদের সক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছেন। ফ্রান্সেস রায়ানের এই অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে সক্ষম নারীদের সমাজে তাদের অধিকার আদায়ের পথে আরও বেশি উৎসাহিত করবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *