সমুদ্রে খনিজ খনন: রুখে দাঁড়াচ্ছে মৎস্যজীবীরা, কী হবে ভবিষ্যৎ?

ভারতীয় উপকূলের গভীর সমুদ্রে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের পরিকল্পনা নিয়ে ভারতের কেরালা রাজ্যের মৎস্যজীবীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গভীর সমুদ্র থেকে মূল্যবান খনিজ উত্তোলনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের জেলেরা।

তাঁদের আশঙ্কা, এই প্রকল্পের কারণে জীবিকা হারানোর পাশাপাশি পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে।

কেরালার উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মৎস্যজীবীদের জীবন সাগরের উপর নির্ভরশীল। তাঁদের প্রধান জীবিকা হল মাছ ধরা।

গভীর সমুদ্রে খনিজ উত্তোলনের পরিকল্পনা তাঁদের জীবনযাত্রায় সরাসরি আঘাত হানবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। এই প্রকল্পের ফলে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা তাঁদের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটাবে।

স্থানীয় জেলে সেবাস্টিয়ান স্টিফেন, যিনি বয়সের কারণে এখন সরাসরি মাছ ধরতে পারেন না, এই প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।

তাঁর কথায়, “আমাদের রুটি-রুজির পথ বন্ধ হয়ে যাবে, এটা আমরা কিছুতেই হতে দেব না।

কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, মৎস্যজীবীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে তারা সব রকম পদক্ষেপ নেবে।

সম্প্রতি, রাজ্যের বিধানসভায় এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাবও পাশ হয়েছে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে।

শুধু রাজনৈতিক দলগুলিই নয়, এই ইস্যুতে সাধারণ মানুষের সমর্থনও বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গভীর সমুদ্র থেকে খনিজ উত্তোলনের ফলে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশের বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে।

এছাড়া, উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিতে পারে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আরও বেশি বিপদ ডেকে আনবে।

কেরালা উপকূলের পরিবেশবিদ এবং বিজ্ঞানীরাও এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন।

তাঁদের মতে, এই ধরনের কার্যকলাপ উপকূলের প্রবাল প্রাচীরগুলির ক্ষতি করবে, যা সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য জানাচ্ছে, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল দেশের খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা।

তাদের যুক্তি, এই পদক্ষেপ ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে এবং বিভিন্ন শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করবে।

সরকার আরও জানিয়েছে, পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

তবে, স্থানীয় মৎস্যজীবীরা সরকারের এই আশ্বাসকে যথেষ্ট মনে করছেন না।

ভারতের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও এই ইস্যুতে মৎস্যজীবীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা না করে এবং পরিবেশের উপর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা না করেই এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তাঁর মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভারতের এই পদক্ষেপ গভীর সমুদ্রের খনিজ উত্তোলনের বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে জড়িত।

উন্নত দেশগুলোও এখন এই ধরনের খনিজ সম্পদের দিকে ঝুঁকছে, যা তাদের সবুজ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে, পরিবেশবিদরা মনে করেন, এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে পরিবেশের উপর এর প্রভাবগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করা উচিত।

কেরালার মৎস্যজীবীরা তাঁদের জীবন ও পরিবেশ রক্ষার জন্য একজোট হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

তাঁদের দাবি, সরকার যেন অবিলম্বে এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এবং তাঁদের জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

তাঁরা তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *