আতঙ্কের রাত! আইডাহো হত্যাকাণ্ডের বিচারে আজ কী হতে চলেছে?

**আইডাহো ছাত্র হত্যা মামলা: গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নিয়ে শুনানিতে বিচারক**

যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোতে (Idaho) ২০১৮ সালে সংঘটিত চার ছাত্র হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্রায়ান কোহবার্গারের (Bryan Kohberger) বিরুদ্ধে মামলার শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলো গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বিচারক।

বুধবার (স্থানীয় সময়) শুরু হওয়া এই শুনানিতে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিতব্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করবেন।

মামলার শুনানিতে প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, ঘটনার রাতে নিহতদের বাড়িতে উপস্থিত থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শীর দেওয়া অভিযুক্তের চেহারার বর্ণনা, ঘটনার সময়কার ফোন কল ও খুদে বার্তার রেকর্ড, এবং কোহবার্গারের দেওয়া আত্মপক্ষ সমর্থনের স্বপক্ষে যুক্তি।

২০২২ সালের নভেম্বরে ইউনিভার্সিটি অফ আইডাহোর (University of Idaho) চার শিক্ষার্থীর – ম্যাডিসন মোগেন, কাইলি গনকালভেস, জেনা কার্নোডল ও ইথান চ্যাপিন – মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্রায়ান কোহবার্গারের বিরুদ্ধে চারটি ‘ফার্স্ট-ডিগ্রি মার্ডার’-এর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে, কোহবার্গার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

শুনানিতে বিচারক স্টিভেন হিপলারের (Steven Hippler) সিদ্ধান্ত মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

বিচারক মূলত ঠিক করবেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে কোন কোন বিষয়গুলো বিচারপ্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা যাবে।

প্রসিকিউটররা (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) আদালতে প্রমাণ করতে চাইছেন যে, হত্যাকাণ্ডের সময় পাওয়া একটি ছুরির খাপে কোহবার্গারের ডিএনএ (DNA) পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, কোহবার্গারের আইনজীবীরা বলছেন, এই ডিএনএ প্রমাণকে যেন আদালতে উপস্থাপন করা না হয়।

এছাড়াও, প্রসিকিউশন, কোহবার্গারের অনলাইনে ছুরি ও খাপ কেনার তথ্য প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে চাইছে।

আইনজীবীদের দাবি, হত্যার কয়েক মাস আগে তিনি এই জিনিসপত্র কেনেন এবং ঘটনার পরপরই সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ করেন।

তবে, আসামীপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি হলো, অন্য কেউও কোহবার্গারের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারত।

তারা এই যুক্তির স্বপক্ষে অন্যান্য কেনাকাটার উদাহরণও তুলে ধরেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আরও বলছেন, ঘটনার রাতে নিহতদের রুমমেটদের একজন, যিনি হামলাকারীকে দেখেছিলেন, তিনি হামলাকারীর “ভুরু” নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছিলেন।

অভিযুক্তের আইনজীবীরা এই বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।

তাদের মতে, প্রত্যক্ষদর্শীর দেওয়া এই বর্ণনা নির্ভরযোগ্য নয়।

কারণ, ঘটনার পরে বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যে অসংগতি দেখা গেছে।

কোহবার্গারের আইনজীবীরা আরও আবেদন করেছেন, ঘটনার পরে কোহবার্গারের তোলা একটি সেলফি যেন আদালতে উপস্থাপন করা না হয়।

তাদের মতে, এই ছবিটির মাধ্যমে বিচারকদের মনে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে।

আদালতে নিহত শিক্ষার্থীদের রুমমেটদের ফোন রেকর্ডগুলো কীভাবে উপস্থাপন করা হবে, সেই বিষয়েও উভয়পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

প্রসিকিউটররা তাদের ফোন থেকে পাঠানো কিছু বার্তা প্রমাণ হিসেবে দেখাতে চান।

তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ঘটনার আট ঘণ্টা পর নিহতদের রুমমেটরা জরুরি ফোন করেছিলেন এবং তাদের সম্পূর্ণ কথোপকথন বিচারকদের সামনে আনা উচিত।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এও জানিয়েছেন যে, কোহবার্গারের অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (Autism spectrum disorder) রয়েছে, যা সম্ভবত তার বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

আদালতে শুনানির সময় অভিযুক্তের আইনজীবীরা আসামীর মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করছেন।

তাদের যুক্তি, কোহবার্গারের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত হবে না।

আগামী আগস্ট মাসে এই মামলার বিচারকাজ শুরুর কথা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *