পূর্ব ইউরোপের রন্ধনশৈলী: বাঁধাকপির বাইরে এক ভিন্ন জগৎ
পূর্ব ইউরোপের খাদ্য মানেই কি শুধু বাঁধাকপি? অনেকের মনে হয়তো এমন ধারণা রয়েছে। কিন্তু এই ধারণা বদলে দিতে এক শেফের অবিরাম প্রচেষ্টা। তিনি প্রমাণ করেছেন, পূর্ব ইউরোপের খাবার আসলে এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু।
সেখানে রয়েছে সংস্কৃতির বৈচিত্র্য, ইতিহাসের ছাপ, আর স্বাদের এক দারুণ মিশ্রণ।
সাইবেরিয়ার ওমস্কে জন্ম নেওয়া এক শেফ তাঁর রান্নার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন পূর্ব ইউরোপের খাদ্য সংস্কৃতির আসল চিত্র। তাঁর পরিবারের শিকড় ছড়িয়ে আছে ইউক্রেন, বেলারুশ এবং পোল্যান্ডে। তিনি মনে করেন, এই অঞ্চলের খাবার শুধু একটি রান্নার পদ্ধতি নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘ ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
তাঁর মতে, বিভিন্ন সাম্রাজ্য আর দেশের সংস্কৃতি মিলেমিশে এই অঞ্চলের খাবারে ভিন্নতা এনেছে।
শেফের শৈশব কেটেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনের মধ্যে। সে সময় খাবার জোগাড় করাটাই ছিল কঠিন। বহু প্রজন্মের মানুষ একই বাড়িতে থাকতেন, আর রান্নাঘরের আনাচে-কানাচে চলত গল্প আর রেসিপির আদান-প্রদান।
সেই সময়কার কঠিন পরিস্থিতি, খাদ্যের অভাব, সবকিছু মিলেমিশে যেন এক জাদু তৈরি হয়েছিল।
শেফের মতে, পূর্ব ইউরোপের রান্নার মূল ভিত্তি হল ঐতিহ্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা রান্নার ধারা, যা প্রতিটি পরিবারের গল্প বলে। এই অঞ্চলের খাবারে বিভিন্ন ধরনের সবজির ব্যবহার দেখা যায়, বিশেষ করে বাঁধাকপি তো আছেই।
এছাড়াও, নানান ধরনের ডাম্পলিং, টক ক্রিম, এবং বিভিন্ন ধরনের ভেষজ ও মশলার ব্যবহার এই অঞ্চলের রান্নার বৈশিষ্ট্য। গ্রীষ্মকালে এখানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় নানান ধরনের ভেষজ – যেমন, ডিল, পার্সলে, এবং ধনে পাতা।
খাবারের স্বাদ বাড়াতে তারা ব্যবহার করেন জিরা, মৌরি এবং গোলমরিচের মতো মসলা।
শেফের দ্বিতীয় রান্নার বই লেখার পেছনে একটি বিশেষ কারণ ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ তাঁকে তাঁর পরিবারের শিকড় সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। তিনি জানান, আগে তিনি নিজেকে রুশ হিসেবে পরিচয় দিতেন, কারণ সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা।
কিন্তু তাঁর পরিবার ছিল নানা জাতি ও সংস্কৃতির মিশ্রণ, যা তাঁর রান্নার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
পূর্ব ইউরোপের খাদ্যের ওপর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রভাব রয়েছে। অটোমান সাম্রাজ্যের প্রভাবে এখানকার খাবারে ভূমধ্যসাগরের রান্নার একটি ছোঁয়া পাওয়া যায়।
বুলগেরিয়া ও ইউক্রেনের মতো অঞ্চলে, টার্কিশ এবং গ্রিক খাবার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয় মজাদার “ফিলো” পাই।
আবার চেক রিপাবলিক, স্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরির কিছু অংশে পাওয়া যায় অস্ট্রিয়ান এবং জার্মান খাবারের প্রভাব।
শেফের রান্নার বইটির নাম “কাপুস্তা” – যা অনেক পূর্ব ইউরোপীয় স্লাভিক ভাষায় বাঁধাকপিকে বোঝায়। বাইরের বিশ্বে তাঁর অঞ্চলের খাবারকে প্রায়ই বাঁধাকপির সঙ্গে তুলনা করা হত। তাই তিনি এই ধারণা ভেঙে দিতে চেয়েছেন।
তাঁর মতে, বাঁধাকপি শুধু একটি সবজি নয়, বরং এটি পূর্ব ইউরোপের মানুষের কষ্টসহিষ্ণুতার প্রতীক।
এই শেফের কাজটি প্রমাণ করে, খাবার শুধু আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে না, বরং তা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁর রান্নার মাধ্যমে, পূর্ব ইউরোপের খাদ্য সংস্কৃতি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করছে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক