গাজায় বোমা হামলায় বিধ্বস্ত বিশ্ববিদ্যালয়, উদ্বাস্তু জীবনের করুণ চিত্র!

গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো। গাজা শহরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটির দৃশ্য এখন আর আগের মতো নেই। এক সময়ের প্রাণবন্ত এই শিক্ষাঙ্গন আজ যুদ্ধের বিভীষিকা বহন করছে।

ক্লাসরুমগুলো এখন উদ্বাস্তুদের অস্থায়ী আবাস। মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় অভিযান শুরুর পর থেকে উত্তর গাজায় শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে এখানে।

জাতিসংঘের স্কুলগুলো উপচে পড়ায় তারা বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নিতে এসেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলার কারণে গাজায় এরই মধ্যে প্রায় ৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার ঘরছাড়া হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল মিলনায়তনটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কালো হয়ে যাওয়া দেয়ালে বিশাল গর্ত, ভাঙা বসার বেঞ্চ—যেন যুদ্ধের ভয়াবহতার নীরব সাক্ষী।

এক সময় যেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে গ্র্যাজুয়েশন হতো, সেখানে এখন বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবু। হিয়াম আল-কাফারনা নামের এক নারী পরিবারের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করছেন, যা ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে।

আল-বাসিউনি পরিবারের সদস্যরাও সেখানে তাঁবু তৈরি করে রান্নার কাজ করছেন। গাজার ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইসলামিক ইউনিভার্সিটিও গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদদের মতে, এটি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ বা ‘স্কলাসটিসাইড’-এর একটি উদাহরণ। বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক পরিবেশ এখন পুরোপুরি বদলে গেছে।

ক্লাসরুমগুলোতে উদ্বাস্তু পরিবারগুলো তাদের তাঁবু তৈরি করেছে। জ্বালানির অভাবে তারা লাইব্রেরির বইগুলো পুড়িয়ে রান্না করছে।

শিশুরা ধ্বংসস্তূপের মাঝে খেলাধুলা করছে। ছয় সন্তানের মা মানাল জা’নিন একটি ফাইল ক্যাবিনেটকে অস্থায়ী ওভেন বানিয়ে রুটি তৈরি করছেন, যা তিনি অন্যান্য পরিবারের কাছে বিক্রি করেন।

পানি সংগ্রহের জন্য পরিবারগুলো ট্রাক্টরের জ্বালানি কেনার জন্য অর্থ জমা করছে। মূল ফটকের নিচে একটি অস্থায়ী বাজারও তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েল গত এক মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সাহায্য সংস্থাগুলোর সীমিত ত্রাণ সামগ্রীর ওপর নির্ভরশীল গাজার মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

যুদ্ধ শুরুর আগে ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষার্থী ছিল, যেখানে বিজ্ঞান, সাহিত্য ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা হতো। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ছিল নারী।

বোমা হামলা এবং স্থল অভিযানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টসহ অন্তত ১০ জন শিক্ষক ও ডিন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী সুফিয়ান তায়াহ এবং ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রিফাত আলায়ার। ইসরায়েলের হামলায় ইসরা ইউনিভার্সিটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।

বর্তমানে গাজার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চলছে না। ইসলামিক ইউনিভার্সিটির মতো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত আকারে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *