যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি: ফ্লোরিডার ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, ভোক্তাদের উপর সম্ভাব্য প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে নেওয়া শুল্ক নীতির কারণে ফ্লোরিডার ছোট ব্যবসায়ীরা এবং সাধারণ ক্রেতারা এখন উদ্বেগে রয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর এর প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে।
বিশেষ করে খাদ্যপণ্য, পোশাক, ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফ্লোরিডার গেইনসভিলে বসবাসকারী ৭৪ বছর বয়সী সিনথিয়া বার্টেলসেন জানিয়েছেন, তিনি আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিভিন্ন জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উদ্বিগ্ন। তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শুধু সিনথিয়াই নন, অনেক সাধারণ মানুষই মনে করছেন, এর ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা হবে।
এই শুল্ক নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে পারে কফি শিল্প। কারণ, কফি উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অনেকের উপরেই উচ্চহারে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়ার উপর ৩২%, নিকারাগুয়ার উপর ১৮% এবং লাওসের উপর ৪৮% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। গেইনসভিলে অবস্থিত একটি কফি প্রস্তুতকারক কোম্পানি, সুইটওয়াটার অর্গানিক কফি কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের কফির দাম বাড়াতে হতে পারে।
কারণ, কাঁচামালের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে। তারা বিভিন্ন দোকান ও ক্যাফেতে কফি সরবরাহ করে থাকে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্ক নীতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের উপর বড় ধরনের আর্থিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাব-এর হিসাব অনুযায়ী, এই শুল্কের কারণে একটি পরিবারের বছরে প্রায় ৩৮০০ ডলার অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।
তবে, অনেকে মনে করেন, এই শুল্ক নীতি দেশের জন্য ভালো। তাদের মতে, এর ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন এবং কর্মসংস্থান বাড়বে।
ওকালা শহরের একজন ইলেক্ট্রিক্যাল কন্ট্রাক্টর জাস্টিন গডউইন মনে করেন, এর মাধ্যমে ‘আমেরিকা আবার মহান হবে’।
অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, এই নীতি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হবে। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতি বিশ্ব বাণিজ্যকে নতুন দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
যদি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তাইওয়ান বা ভিয়েতনামের উপর শুল্ক বাড়ায়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। আবার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগও তৈরি হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি যুক্তরাষ্ট্র অন্য কোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে বাংলাদেশ সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি একটি জটিল বিষয়, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্যকেও প্রভাবিত করে।
এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান