স্বামী-স্ত্রীর মতোই সুখ দিতে পারে পোষ্য! গবেষণায় মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

পোষা প্রাণী: দাম্পত্য জীবনের মতোই মানসিক শান্তির উৎস? নতুন গবেষণা

আমাদের সমাজে অনেকেই হয়তো একাকীত্ব অনুভব করেন। বন্ধু বা পরিবারের সান্নিধ্য সবসময় পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে একটি পোষা প্রাণী হতে পারে আপনার শ্রেষ্ঠ সঙ্গী। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা জানাচ্ছে, একটি বিড়াল অথবা কুকুর আপনার জীবনে দাম্পত্য সম্পর্কের মতোই আনন্দ এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে।

এমনকি, এর ফলস্বরূপ জীবনযাত্রার মানের যে উন্নতি হয়, তা বছরে প্রায় ৭ কোটি টাকার (৯ লক্ষ মার্কিন ডলারের) সমান হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অ্যাডেলিনা গশভান্ডনার এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইকেল গেমেইনারের যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

‘সোশ্যাল ইন্ডিকেটরস রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় ব্রিটেনের আড়াই হাজার পরিবারের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে সমীক্ষা চালানো হয়। গবেষকরা মূলত দেখতে চেয়েছেন, পোষ্যদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সরাসরি প্রভাব তাদের জীবনযাত্রার মানের ওপর কতটা।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের বাড়িতে একটি পোষ্য রয়েছে, তাদের জীবনযাত্রার মান, যারা বিবাহিত বা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান, তাদের মতোই উন্নত।

গবেষকরা পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের মতে, পোষ্য থাকলে জীবনযাত্রার মানের যে উন্নতি হয়, তার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা।

এই হিসাব বিবাহিত জীবন অথবা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করার কারণে পাওয়া সুবিধার মতোই।

গবেষণার ফল দেখে বিজ্ঞানীরাও বিস্মিত হয়েছিলেন। অধ্যাপক গশভান্ডনার জানান, “প্রথমদিকে যখন আমি এই তথ্য পাই, তখন আমি নিজেও অবাক হয়েছিলাম।

আমার মনে হয়েছিল, এটা অনেক বড় একটি অঙ্ক, এমনকি আমার কাছেও।

তিনি আরও যোগ করেন, “অধিকাংশ মানুষই তাদের পোষ্যদের বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের মতোই মনে করেন, তাই এই ফল স্বাভাবিক।”

তবে, এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমতও রয়েছে।

টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেগান মুয়েলার, যিনি মানুষ ও পশুর সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি মনে করেন, পোষ্যদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়।

“আমরা অনেকেই মনে করি, পোষ্যরা আমাদের জীবনকে উন্নত করে।

তবে গবেষণায় এর পরিমাপ বিভিন্নভাবে আসে।

মানুষের সঙ্গে পশুর সম্পর্ক, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের মতো নয়।

গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের মন ভালো রাখতে পোষা প্রাণীর গুরুত্ব অপরিসীম।

এই কারণে, পোষ্যদের মালিকানার ক্ষেত্রে বিদ্যমান কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা ভাবা যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাঁদের পোষ্য রাখার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

গবেষণায় পোষ্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি উঠে এলেও, পশুদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়াটাও জরুরি।

পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *