নোবেলজয়ীর চোখে আমেরিকা: সাফল্যের চাবিকাঠি, আজ কেন বিপদ?

নোবেল জয়ী: আমেরিকার সাফল্যের চাবিকাঠি বিজ্ঞান, আজ তার ভবিষ্যৎ সংকটে।

বিজ্ঞান মানবজাতির অগ্রগতির এক অপরিহার্য চালিকাশক্তি। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রযুক্তির উদ্ভাবন, সবকিছুই বিজ্ঞানের অবদানে সমৃদ্ধ।

সম্প্রতি, চিকিৎসা বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার জয়ী ড. আর্ডেম পাটাপৌতিয়ান এক গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তাঁর মতে, বর্তমানে আমেরিকায় বৈজ্ঞানিক গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর ফলে দেশটির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।

এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানচর্চা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাতেও।

ড. পাটাপৌতিয়ান, যিনি তাপমাত্রা ও স্পর্শ বিষয়ক রিসেপ্টর আবিষ্কারের জন্য ২০২১ সালে নোবেল পুরস্কার পান, তাঁর নিজের সাফল্যের পেছনে আমেরিকার বিজ্ঞানচর্চার পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছেন।

লেবাননের গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা এই বিজ্ঞানী, আমেরিকায় এসে শিক্ষা, গবেষণা এবং মুক্ত চিন্তার সুযোগ পান। ফেডারেল প্যাল গ্রান্টের (Pell Grant) মতো সরকারি সহায়তায় তিনি বিজ্ঞানচর্চায় নিজেকে বিকশিত করতে পেরেছিলেন।

কিন্তু বর্তমানে তিনি গভীর দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছেন, আমেরিকার বিজ্ঞান গবেষণায় সরকারি অনুদান কমানো হচ্ছে। এর ফলে মৌলিক গবেষণা, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তৈরি এবং তরুণ বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

উন্নত বিশ্বে আমেরিকার বিজ্ঞানচর্চা ঈর্ষণীয় হলেও, এই নীতি চলতে থাকলে দেশটির আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘কীট্রুডা’ (Keytruda) এবং ‘সিসপ্ল্যাটিন’ (Cisplatin)-এর মতো জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, অথবা রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত এমআরআই স্ক্যানিং (MRI scanning) সবই সরকারি অর্থায়নে হওয়া গবেষণার ফল।

গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. পাটাপৌতিয়ান জানান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (National Institutes of Health – NIH)-এর অর্থায়নে হওয়া প্রতিটি ডলার স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রায় ২.৫৬ ডলারের বেশি যোগ করে।

শুধু তাই নয়, এই তহবিল ৪ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করে এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর ৯৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি যোগান দেয়।

বিজ্ঞান গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগ কমানো মানে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করা। এমনটা হলে নতুন উদ্ভাবন যেমন কমে যাবে, তেমনি তরুণ বিজ্ঞানীরাও গবেষণা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

মেধাবী বিজ্ঞানীরা তখন উন্নত সুযোগের আশায় অন্য দেশে পাড়ি জমাতে পারেন। ড. পাটাপৌতিয়ান উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করেছেন, চীন ইতোমধ্যে তাঁর গবেষণাগার স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ২০ বছর ধরে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বে বায়োটেক (Biotech) বাজারের আকার প্রায় ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই বাজারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে।

চীনসহ অন্যান্য দেশগুলো আমেরিকার এই সাফল্যের দিকে তাকিয়ে আছে এবং তাদের লক্ষ্য হলো, এক্ষেত্রে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাওয়া।

ড. পাটাপৌতিয়ানের মতে, বিজ্ঞানচর্চায় অর্থ বিনিয়োগ কমানোর এই সিদ্ধান্তগুলো আসলে আত্মঘাতী। বিজ্ঞানকে সমর্থন করা মানে আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করা।

তিনি বিশেষভাবে রিপাবলিকান নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, বিজ্ঞানকে একটি অরাজনৈতিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করার জন্য।

কারণ, ক্যান্সার ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক এবং বিজ্ঞান ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভুল তথ্য প্রচারের কোনো স্থান নেই।

আমরা যদি আমাদের ভবিষ্যতের সমৃদ্ধি চাই, তবে বিজ্ঞানকে আমাদের সমর্থন করতে হবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *