ডুবে যাওয়া টাইটানিকের অজানা দিক! থ্রিডি স্ক্যানে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

আটলান্টিক মহাসাগরের অতলে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের ত্রিমাত্রিক (3D) চিত্র তৈরি করা হয়েছে, যা জাহাজটির শেষ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করেছে। এই অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কিভাবে এক সময়ের বিশাল এই সমুদ্রযানটি বরফের সঙ্গে ধাক্কা লেগে জলের গভীরে তলিয়ে গিয়েছিল।

একশ তেরো বছর আগে, ১৯১২ সালের ১৫ই এপ্রিল, টাইটানিক উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়। জাহাজটিতে প্রায় ২,২২০ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন, যাদের মধ্যে ১,৫০০ জনের বেশি মানুষ সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

এটি ছিল ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সমুদ্র-দুর্ঘটনা। সম্প্রতি, গভীর সমুদ্রের মানচিত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ম্যাজেলান (Magellan) এই ডুবন্ত জাহাজের একটি বিস্তারিত ডিজিটাল মডেল তৈরি করেছে। এই মডেল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যা টাইটানিকের ভেতরের বিভিন্ন অংশের ছবি তুলে ধরেছে, এমনকি ছোট ছোট খুঁটিনাটি বিষয়ও স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।

নতুন এই অনুসন্ধানে টাইটানিকের ধ্বংসের কারণগুলো আরো স্পষ্টভাবে জানা গেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বরফের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর কিভাবে জাহাজটি ভেঙে গিয়েছিল। এই মডেলের মাধ্যমে জানা গেছে, ইঞ্জিন রুমের কর্মীরা জাহাজটিকে বাঁচানোর জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছিলেন।

বিশেষভাবে, বাষ্পীয় ভালভ খোলা রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ইঞ্জিনিয়াররা সম্ভবত তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন অন্যান্য যাত্রীদের জীবন বাঁচানোর জন্য।

এই অনুসন্ধানে টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার উইলিয়াম মারডকের ভূমিকা নিয়েও নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। আগে তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ উঠেছিল। তবে নতুন মডেলের তথ্য অনুযায়ী, লাইফবোট (জীবনদড়ি) নামানোর সময় তিনি হয়তো সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে গিয়েছিলেন।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে ‘টাইটানিক: দ্য ডিজিটাল রিসারেকশন’ (Titanic: The Digital Resurrection) নামের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে, যেখানে এই অনুসন্ধানের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে, টাইটানিকের সেই ভয়াবহ রাতের ঘটনাগুলো নতুন করে জানতে পারা যাবে।

তথ্যচিত্রটি ১১ই এপ্রিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে এবং ১২ই এপ্রিল থেকে ডিজনি+ (Disney+) ও হুলু (Hulu)-এর মতো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে।

টাইটানিকের এই ডিজিটাল মডেল তৈরি ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি শুধু প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের প্রমাণ নয়, বরং টাইটানিকের স্মৃতিকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঁচিয়ে রাখবে। এই অনুসন্ধানের ফলে টাইটানিক সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও স্পষ্ট হবে এবং সেই ট্র্যাজেডির কারণগুলো সম্পর্কে নতুন দিশা মিলবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *