গুগল, আমাজন: জলের অভাবে ভুগছে, তবু ডেটা সেন্টার বানাচ্ছে?

প্রযুক্তি জায়ান্টদের ডেটা সেন্টার: জলের সংকট বাড়ছে বিশ্বের শুষ্ক অঞ্চলে, বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা?

বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে বাড়ছে ডেটা সেন্টারের চাহিদা। অ্যামাজন, মাইক্রোসফট এবং গুগলের মতো বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের ডেটা সেন্টার স্থাপন করছে বিশ্বের শুষ্ক অঞ্চলগুলোতে।

এই ডেটা সেন্টারগুলো বিপুল পরিমাণ জল ব্যবহার করে, যা সেখানকার স্থানীয় জনগণের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনা জল ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, এবং অন্যান্য জল-সংকটপূর্ণ অঞ্চলে এই ডেটা সেন্টারগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। “সোর্সমেটেরিয়াল” এবং “দ্য গার্ডিয়ান”-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই কোম্পানিগুলো তাদের ডেটা সেন্টারগুলোর জন্য জলের বিপুল ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।

উদাহরণস্বরূপ, স্পেনের আরাগন অঞ্চলে অ্যামাজনের নতুন তিনটি ডেটা সেন্টার বছরে প্রায় ৭,৫৫,৭২০ ঘনমিটার জল ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে, যা ওই অঞ্চলের প্রধান ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জলের সমান।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অনেক অঞ্চলে পানির সংকট বাড়ছে। একদিকে যখন পানির অভাব দেখা যাচ্ছে, তখন ডেটা সেন্টারগুলোর এই জল ব্যবহারের ফলে স্থানীয় জনগণের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যদিও তাদের কার্যক্রমের জল ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলছে, যেমন – ২০৩০ সালের মধ্যে “জল-ইতিবাচক” হওয়ার ঘোষণা, কিন্তু তাদের এই পদক্ষেপগুলো কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানোর মতো জল ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সহজ নয়। একটি অঞ্চলের জল অন্য অঞ্চলে সরবরাহ করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।

স্থানীয় পর্যায়ে জলের ব্যবহার কমাতে না পারলে সংকট আরও বাড়বে।

অন্যদিকে, ডেটা সেন্টারগুলো শীতলীকরণের জন্য প্রচুর পরিমাণে জল ব্যবহার করে। ডেটা সেন্টারগুলি ঠান্ডা রাখার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও, এখনো পর্যন্ত জলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।

এর ফলে, শুষ্ক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজন তাদের প্রয়োজনীয় জল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশও একটি জল-সংকটপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

প্রযুক্তি এবং শিল্পের প্রসারের সাথে সাথে আমাদের দেশেও জলের চাহিদা বাড়বে। তাই এখনই জল ব্যবস্থাপনার সঠিক পরিকল্পনা করা জরুরি।

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের উচিত, ডেটা সেন্টার এবং অন্যান্য শিল্প স্থাপন করার আগে জলের ব্যবহার এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা।

পানির টেকসই ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি এবং নীতিমালা তৈরি করতে হবে। জনগণের জলের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং স্থানীয় পরিবেশের উপর ডেটা সেন্টারগুলোর প্রভাব কমাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সুতরাং, প্রযুক্তি জায়ান্টদের ডেটা সেন্টারের জল ব্যবহারের এই সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই জল ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *