ইউরোপীয় মডেলের চ্যালেঞ্জ: নতুন জাদুঘরে আফ্রিকার সংস্কৃতি!

লাগোসে ঐতিহ্যকে নতুন রূপে তুলে ধরছে একটি জাদুঘর: ইউরো-কেন্দ্রিক মডেলের বাইরে।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার বৃহত্তম শহর লাগোস। এখানকার সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে এবং ঐতিহ্যকে নতুন করে তুলে ধরতে একটি ব্যতিক্রমী জাদুঘর যাত্রা শুরু করেছে।

জন র্যান্ডল সেন্টার ফর ইয়োরুবা হিস্টোরি অ্যান্ড কালচার নামের এই জাদুঘরটি গত বছর অক্টোবর মাসে চালু হয়েছে।

এটি লাগোসের সংস্কৃতি কেন্দ্র, ওনিকান অঞ্চলে অবস্থিত।

ঐতিহ্যবাহী জাদুঘরের ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে ইয়োরুবা সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল চিত্র ফুটিয়ে তোলাই এই জাদুঘরের মূল লক্ষ্য।

এখানকার প্রধান স্থপতি সিউন ওডুওলের মতে, এই জাদুঘরটি পুরনো দিনের “ইউরো-কেন্দ্রিক” মডেলের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

তিনি জানান, পুরনো মডেল সংস্কৃতিকে উদযাপন করার পরিবর্তে, যেন বস্তুর মতো করে দেখাতো।

এই জাদুঘর নির্মাণের আগে, স্থানীয় ইয়োরুবা সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করা হয়।

এখানকার প্রদর্শনীগুলোতে ইয়োরুবা সংস্কৃতি, লোককথা এবং জীবনযাত্রার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।

দর্শকদের জন্য এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারেক্টিভ ব্যবস্থা, যা তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করে।

এই জাদুঘরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এখানকার সংগ্রহ।

ইয়োরুবা সংস্কৃতির বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

বিভিন্ন জাদুঘর এবং সংগ্রহশালা থেকে জিনিসপত্র ধার করে আনা হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে ধার করে আনা ‘ল্যান্ডার স্টুল’ নামের একটি কাঠের তৈরি চেয়ার।

এটি ইয়োরুবা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতীক।

জাদুঘরের প্রদর্শনীগুলোতে ইয়োরুবা ভাষার ব্যবহারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এখানকার সবকিছুতে ইয়োরুবা ভাষার ব্যবহার করা হয়েছে, এবং তার নিচে ইংরেজি অনুবাদ দেওয়া হয়েছে।

এর মাধ্যমে, ইয়োরুবা সংস্কৃতিকে সবার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

জাদুঘরের স্থাপত্যশৈলীতেও ইয়োরুবা সংস্কৃতির ছাপ রয়েছে।

এখানকার মেঝে তৈরি করা হয়েছে বালু ও নুড়ি দিয়ে, যা ইয়োরুবা গ্রামের মাটির কথা মনে করিয়ে দেয়।

এছাড়া, ছাদের কারুকার্যে ইয়োরুবাদের ঐতিহ্যবাহী নকশা ব্যবহার করা হয়েছে।

এই জাদুঘরের মাধ্যমে ইয়োরুবা সংস্কৃতির একটি নতুন দিক উন্মোচন করা হয়েছে।

এখানে ইয়োরুবা সংস্কৃতিকে আধুনিকতার সাথে মেলানো হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, এখানে জনপ্রিয় শিল্পী বেলা কুটির সঙ্গীত এবং আধুনিক ইয়োরুবা সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।

দর্শনার্থীরা এখানে ইয়োরুবা দেবদেবী এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাকের সাথে পরিচিত হতে পারে।

এই জাদুঘর ইয়োরুবা সংস্কৃতির মানুষদের জন্য একটি গর্বের স্থান।

এটি তাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে।

একই সাথে, এটি একটি দৃষ্টান্ত, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে নতুন দিগন্ত দেখাতে পারে।

আমাদের দেশের জাদুঘরগুলোও এই ধরনের নতুনত্ব আনতে পারে, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করবে এবং আমাদের সংস্কৃতিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *