বদলে যাচ্ছে ট্যাটুর দিন: কেন এই প্রবণতা?
আজকাল ট্যাটু করানো একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে সময়ের সাথে সাথে অনেকেরই এই ট্যাটুর প্রতি মোহভঙ্গ হচ্ছে।
কেউ কেউ পুরনো ট্যাটু মুছে ফেলতে চাইছেন, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এটি একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ট্যাটু করানোর পর প্রতি চারজনে একজন সেটি অপসারণ করতে চান।
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের বাসিন্দা, পেশায় আর্ট ডিরেক্টর জ্যাক গিলার্ডের কথাই ধরা যাক। হাই স্কুল শেষ করার পর তিনি প্রথম ট্যাটু করান, কিন্তু পরিবারের কাউকে জানাননি।
এরপর বেশ কয়েক বছর পর, তিনি যখন একটি বড় আকারের ট্যাটু আঁকতে শুরু করেন, তখন তার মধ্যে অস্বস্তি দেখা দেয়। তিনি জানান, ট্যাটু করানোর পর তিনি সবসময়ই এক ধরনের অনুশোচনা অনুভব করতেন।
অবশেষে তিনি সেই ট্যাটু অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
শুধু গিলার্ডই নন, অনেক সেলিব্রিটিদেরও ট্যাটু অপসারণ করতে দেখা গেছে। হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তার প্রাক্তন স্বামী বিলি বব থর্নটনের নাম মুছে ফেলেন।
মেগান ফক্স তার শরীরে আঁকা মেরিলিন মনরোর ছবি অপসারণ করেছেন। ফ্যাশন এবং বিনোদন জগতে এমন উদাহরণ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাটু অপসারণের জন্য এখন উন্নত প্রযুক্তি উপলব্ধ। লেজার রশ্মির মাধ্যমে ত্বকের গভীরে থাকা কালি ভেঙে দেওয়া হয়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বারা শোষিত হয়।
তবে এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। একটি সেশনের জন্য খরচ হতে পারে প্রায় ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মতো (১০০-৬১৫ মার্কিন ডলার)।
ট্যাটু অপসারণের কারণগুলোও বিভিন্ন। কেউ চান তাদের পুরনো ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত শুধরে নিতে, আবার কারো ক্ষেত্রে এটি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বাধ্যবাধকতার ফল।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা সাশা গোল্ডবাস-নাজারিয়ান তার স্বামীর পরিবারের রক্ষণশীলতার কারণে ট্যাটু অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন।
তবে, ট্যাটু অপসারণ প্রক্রিয়া সবসময় সহজ নয়। অনেক সময় এটি বেশ বেদনাদায়ক হতে পারে।
এছাড়া, ত্বকের ধরন ও ট্যাটুর আকারের উপর নির্ভর করে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, অপসারণের পর ত্বকের রং পরিবর্তন হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
এই বিষয়ে সিঙ্গাপুরের আর্থিক উপদেষ্টা জেইন ফু’র অভিজ্ঞতা বেশ কঠিন ছিল। তিনি তার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ ট্যাটু অপসারণ করেছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে তার এই যাত্রা নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন।
তিনি জানান, “আমি নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই। নিজের ত্বক ফিরে পেতে চাই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাটু অপসারণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ, ত্বকের ধরন অনুযায়ী লেজারের তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করা না হলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
সুতরাং, ট্যাটু এখন আর শুধুমাত্র একটি ফ্যাশন নয়, বরং এটি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ট্যাটু করানোর আগে যেমন এর ভালো-মন্দ দিকগুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন, তেমনি অপসারণের ক্ষেত্রেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
তথ্য সূত্র: CNN