বাংলার পর্যটকদের জন্য নোভা স্কোশিয়ার ৫টি মনোমুগ্ধকর শহর।
কানাডার আটলান্টিক উপকূলের একটি প্রদেশ হলো নোভা স্কোশিয়া, যা তার মনোরম দৃশ্য, ঐতিহাসিক শহর এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য সারা বিশ্বে সুপরিচিত। যারা প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন এবং ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান, তাদের জন্য এই প্রদেশটি একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
এখানকার প্রতিটি শহরের নিজস্ব আকর্ষণ রয়েছে, যা একইসঙ্গে উপভোগ করা সম্ভব। চলুন, নোভা স্কোশিয়ার এমন ৫টি শহরের সাথে পরিচিত হওয়া যাক যা আপনার কানাডা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করবে।
১. হ্যালিফ্যাক্স: কানাডার জন্মস্থান
নোভা স্কোশিয়ার রাজধানী হ্যালিফ্যাক্স, শুধু একটি শহর নয়, বরং কানাডার ইতিহাসের একটি জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ১৭৪৯ সালে ফরাসি ও ব্রিটিশদের মধ্যে আটলান্টিকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই শহরটি গড়ে ওঠে।
এখানকার পুরাতন এলাকাগুলোতে পায়ে হেঁটে ঘুরলে কানাডার অতীতের অনেক গল্প শোনা যায়। হ্যালিফ্যাক্স ওয়াটারফ্রন্ট-এর আশেপাশে রয়েছে আকর্ষণীয় রেস্তোরাঁ ও দোকান, যেখানে আপনি স্থানীয় খাবার ও কেনাকাটার সুযোগ পাবেন।
এখানে আটলান্টিক মেরিটাইম মিউজিয়াম-এ শহরের সমুদ্র বিষয়ক ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়া, ক্যানাডিয়ান মিউজিয়াম অফ ইমিগ্রেশন-এ অভিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কিত প্রদর্শনীও রয়েছে। হ্যালিফ্যাক্সের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সিটাডেল হিল-এ দাঁড়িয়ে শহরের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে।
২. লুনেনবার্গ: ইতিহাসের সাক্ষী
ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত লুনেনবার্গ শহরটি যেন সময়ের ক্যানভাসে আঁকা একটি ছবি। এখানকার রঙিন ঔপনিবেশিক ভবনগুলো সমুদ্রের কাছাকাছি পাহাড়ের ঢালে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
এখানকার ফিশারিজ মিউজিয়াম অফ দ্য আটলান্টিকে গেলে এখানকার পুরনো দিনের গল্প শোনা যায়। আপনি চাইলে ব্লু নোজ-২ জাহাজে চড়ে এখানকার সমুদ্রযাত্রা উপভোগ করতে পারেন।
৩. শেলবার্ন: ব্ল্যাক লয়্যালিস্টদের স্মৃতিচিহ্ন
শেলবার্ন শহরটি দক্ষিণ উপকূলের একটি শান্ত শহর, তবে এর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গভীর ইতিহাস। আমেরিকান বিপ্লবের সময়, প্রায় ৩০০০ ব্ল্যাক লয়্যালিস্ট এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ব্ল্যাক লয়্যালিস্ট হেরিটেজ সেন্টার-এ তাদের সংগ্রামের গল্পগুলো বিভিন্ন প্রদর্শনী ও প্রত্নতত্ত্বের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সেন্ট পলস চার্চ ও ওল্ড স্কুল হাউস মিউজিয়াম-এর মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
৪. পিক্টো: স্কটিশ ঐতিহ্যের কেন্দ্র
পিক্টো, নোভা স্কোশিয়ার একটি ঐতিহাসিক বন্দর শহর, যা ‘নতুন স্কটল্যান্ডের জন্মস্থান’ হিসাবে পরিচিত। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো হেক্টর হেরিটেজ কুই, যেখানে স্কটিশ অভিবাসীদের কানাডায় আগমনের ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে স্কটিশ সংস্কৃতি ও স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে।
৫. উল্ফভিল: আকাদিয়ান সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা
উল্ফভিল একটি ছোট, তবে প্রাণবন্ত শহর, যা আকাদিয়ান সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে আকর্ষণীয় ক্যাফে, বুটিক ও স্থানীয় খাবার দোকান।
গ্র্যান্ড প্রি ন্যাশনাল হিস্টোরিক সাইটে আকাদিয়ানদের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়া, এখানকার আঙুরক্ষেতগুলোতে (vineyard) চমৎকার ওয়াইনের স্বাদ উপভোগ করা যেতে পারে।
নোভা স্কোশিয়া, বিশেষ করে এই পাঁচটি শহর, প্রত্যেক ভ্রমণকারীর জন্য কিছু না কিছু আকর্ষণ নিয়ে আসে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান, এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষেরা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
সুতরাং, যারা একটি স্মরণীয় ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য নোভা স্কোশিয়া হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			