সয়াবিন: ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধে ইউরোপ ও চীনের গোপন কৌশল?

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন-ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে সয়াবিন কি ‘গোপন অস্ত্র’? এমন প্রশ্নই এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ঘুরপাক খাচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর পাল্টা পদক্ষেপের কারণে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

এর প্রধান কারণ হল, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক বৃদ্ধি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাণিজ্য অংশীদারদের উপর শুল্ক আরোপ করার পর, চীনও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ইইউ-ও ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানা গেছে, ইইউ-এর পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এই তালিকায় অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত এবং কৃষি পণ্য, বিশেষ করে সয়াবিন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সয়াবিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধু তাই নয়, বিশ্বজুড়ে খাদ্য হিসেবে এর চাহিদা অনেক। এই পরিস্থিতিতে, চীন এবং ইইউ-এর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে।

কারণ, এই দেশগুলো মার্কিন সয়াবিনের অন্যতম প্রধান ক্রেতা।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ৫ লক্ষেরও বেশি সয়াবিন উৎপাদনকারী রয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২ লক্ষ ২৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। এই শিল্পখাতের আর্থিক মূল্য প্রায় ১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা কেনিয়া বা বুলগেরিয়ার মতো দেশের মোট অর্থনীতির চেয়েও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের মোট সয়াবিন উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রধান বাজার। চীন একাই বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সয়াবিন আমদানি করে।

জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডস-এর মতো ইইউ দেশগুলোও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সয়াবিন কিনে থাকে।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে চীন এখন বিকল্প বাজার খুঁজছে। তারা ব্রাজিল থেকে সয়াবিন আমদানি করা শুরু করেছে। এর ফলে, চীনের বাজারে মার্কিন সয়াবিনের চাহিদা কমে গেছে।

বর্তমানে, ব্রাজিলের সয়াবিন চীনে রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন চাইলে সয়াবিনের বিষয়ে ঝুঁকি নিতে পারে। কারণ তারা ইতিমধ্যেই বিকল্প হিসেবে ব্রাজিলের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কৃষক ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন।

তাদের আশঙ্কা, এই বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘকাল চললে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক হতে পারে। মার্কিন কংগ্রেসে ইতোমধ্যে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা সীমিত করার জন্য বিল উত্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। যদি এই বিল পাস হয়, তবে ট্রাম্প প্রশাসনকে নতুন শুল্ক আরোপের আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে, বাংলাদেশের বাজারে পশুখাদ্য এবং ভোজ্য তেলের দামেও প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, সয়াবিন থেকে উৎপাদিত তেল ও খৈল (animal feed) আমাদের দেশে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *