যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া শুল্কের সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুই পরাশক্তির এই দ্বন্দ্বে বিশ্ব অর্থনীতির উপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে এখন চলছে বিস্তর আলোচনা।
জানা গেছে, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা পণ্যের উপর ট্রাম্প প্রশাসন অন্তত ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে এবং জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়ও প্রভাব পড়তে পারে।
দীর্ঘদিন ধরেই চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে কিছু সমস্যা চলছিল। বিশেষ করে চীনের বাণিজ্যনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অভিযোগ ছিল।
তারা চীনের বিরুদ্ধে মেধাস্বত্ব চুরি, বাজারের সুবিধা না দেওয়া, এবং মুদ্রা কারসাজির মতো অভিযোগ এনেছিল। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ সেই পুরোনো বিতর্কেরই যেন চূড়ান্ত রূপ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যা ২১ শতকের বিশ্বকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। কয়েক দশক আগে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন।
সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের সমাজতান্ত্রিক প্রভাব থেকে দূরে রাখা। এরপর চীনকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (World Trade Organization – WTO) অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি সেই সমস্ত প্রচেষ্টার ব্যর্থতাকেই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী। কিন্তু চীন এক্ষেত্রে ভিন্ন পথে হাঁটছে।
বেইজিং জানিয়েছে, তারা এই পরিস্থিতিতেও তাদের অবস্থান থেকে সরবে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ারও ঘোষণা দিয়েছে তারা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই বাণিজ্য যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি নিয়েছেন। চীনের অর্থনীতি এখন প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক গাড়ি, এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে অনেক এগিয়ে গেছে।
তাই তারা এই শুল্কের প্রভাব সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে, দেশটির অর্থনীতিতে মন্দা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকেই চীনের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হতে পারে।
চীনের পক্ষ থেকে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু খনিজ পদার্থের রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে।
এছাড়া, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের কাছ থেকে সয়াবিন ও শস্য আমদানিও সীমিত করতে পারে চীন।
এমনটা হলে উভয় দেশেরই ক্ষতি হবে, তবে এর মাধ্যমে চীন তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, অনেক ছোট ব্যবসায়ী চীনের থেকে পণ্য আমদানি করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে।
এমন পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর ফলে বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বাড়বে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোও এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে না।
তথ্য সূত্র: CNN