যুক্তরাষ্ট্রে আবিষ্কৃত হচ্ছে এক বিশেষ প্রজাতির গুবরে পোকা, যা হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের লড়াইয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। এই পোকাটির অসাধারণ ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি মারাত্মক কীটনাশকের প্রভাবও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম।
ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি নতুন আশা জাগাচ্ছে। সাধারণত, এই পোকাগুলো পচনশীল মাংসের উপর নির্ভরশীল।
তারা ছোট প্রাণী, যেমন— ইঁদুর, পাখি, ইত্যাদির মৃতদেহ খুঁজে বের করে এবং সেগুলোকে মাটির নিচে পুঁতে রাখে। এরপর, তারা তাদের মুখ ও পায়ুপথের নিঃসরণ দিয়ে মৃতদেহটিকে এমনভাবে ঢেকে দেয়, যা এটিকে অনেক দিন পর্যন্ত তাজা রাখতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হয়তো তারা ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তিশালী করে তোলে।
গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে এই গুবরে পোকার শরীর থেকে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি, তারা আবিষ্কার করেছেন যে এই পোকা নিওনিকোটিনয়েড নামক শক্তিশালী কীটনাশকের বিরুদ্ধেও টিকে থাকতে পারে।
নিওনিকোটিনয়েড কীটনাশকটি পোকামাকড়ের স্নায়ু ব্যবস্থায় আঘাত করে তাদের মেরে ফেলে, কিন্তু এই গুবরে পোকাটির ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। কীটনাশকের সংস্পর্শে আসার পরেও পোকাটি অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির কীটতত্ত্ববিদ ওয়ায়েট হব্যাক বলেছেন, “কীটনাশকের প্রভাবে পোকাগুলো প্রথমে দুর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা আবার আগের মতো সক্রিয় হয়ে ওঠে।”
গবেষকদের মতে, এই পোকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কীটনাশক প্রতিরোধের ক্ষমতা নতুন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা ধারণা করছেন, পোকাটির শরীরে এমন কিছু বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে।
বিজ্ঞানীরা পোকাটির জিনোম এবং মাইক্রোবায়োম নিয়ে গবেষণা করছেন, যার মধ্যে তাদের মুখ ও পায়ু নিঃসরণও অন্তর্ভুক্ত। তাদের লক্ষ্য হল, এই উপাদানগুলোর গঠন এবং কার্যকারিতা ভালোভাবে বোঝা, যা ভবিষ্যতে মানুষের চিকিৎসার জন্য নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই গবেষণা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বর্তমান সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায়, এমন নতুন আবিষ্কার নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক