রিচার্ড রাইট: ক্ষণস্থায়ী শিল্পকর্মের শিল্পী, যাঁর তুলিতে ফুটে ওঠে নক্ষত্রমালা
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী রিচার্ড রাইট। যিনি তাঁর অসাধারণ শিল্পকর্মের জন্য পরিচিত, বিশেষ করে দেয়াল চিত্রগুলির জন্য। এই চিত্রগুলি তৈরি করতে অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় হয়, কিন্তু প্রদর্শনী শেষে সেগুলি হয়তো নষ্ট করে দেওয়া হয়, অথবা কালের নিয়মে ধীরে ধীরে মুছে যায়। তাঁর শিল্পকর্মের এই ক্ষণস্থায়ী রূপটিই যেন তাঁর কাজের একটি বিশেষ দিক।
বর্তমানে, লন্ডনের ক্যামডেন আর্ট সেন্টারে (Camden Art Centre) রাইটের একটি প্রদর্শনী চলছে। সেখানে তাঁর নতুন কাজগুলি দেখা যাচ্ছে, যেখানে কাঁচের প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে, যা আলো দিয়ে সজ্জিত। এছাড়া, কিছু বইও রয়েছে যেগুলিতে তিনি নিজের হাতে আঁকছেন। তাঁর দেয়ালের ছবিগুলোতে জ্যামিতিক আকার এবং সোনার পাতা ব্যবহার করা হয়েছে, যা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
রিচার্ড রাইট ২০০৯ সালে টার্নার পুরস্কার (Turner Prize) জেতেন। এই পুরস্কার তাঁর শিল্পী জীবনের এক উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি। তাঁর কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, গ্রিনউইচের কুইন্স হাউসে আঁকা সিলিং, এডিনবার্গের স্কটিশ ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্টের সিঁড়ির কাজ, এবং আয়ারল্যান্ডের লিসমোর ক্যাসেলের একটি শিল্পকর্ম। তবে, তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজগুলির মধ্যে অন্যতম হল, আমস্টারডামের রিজকস জাদুঘরের (Rijksmuseum) সিলিং-এ আঁকা ৪৭,০০০ তারা।
রাইট-এর শিল্পচর্চার শুরুটা খুব সহজ ছিল না। ১৯৭০-এর দশকে তিনি যখন এডিনবার্গে (Edinburgh) পড়াশোনা করতেন, তখন চিত্রকলার জগৎটা খুব একটা উৎসাহজনক ছিল না। পরে তিনি ছবি আঁকা প্রায় বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি সাইন রাইটিংয়ের কাজ শুরু করেন, যা তাঁর শিল্পী জীবনকে নতুন দিক দিয়েছে। সাইন রাইটিংয়ের মাধ্যমে তিনি শিল্পের প্রতি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পান, যেখানে রঙের ব্যবহার ছিল অনেক বেশি সরল ও সুস্পষ্ট।
রাইট-এর শিল্পকর্মে জ্যামিতি, আকার এবং আলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি একটি বৃত্ত আঁকার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। তাঁর মতে, একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ, এটি কোনো কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং এটি একটি “বিষয়”-এর মতো। তাঁর কাজ শুধু একটি ছবি নয়, বরং এটি অনুভূতির একটি প্রকাশ।
রিচার্ড রাইটের কাজ আমাদের শিল্পকে দেখার নতুন একটি দৃষ্টিকোণ দেয়। তাঁর শিল্পকর্ম, যা ক্ষণস্থায়ী, আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনের পরিবর্তনশীলতা এবং শিল্পকলার গভীরতা।
তথ্য সূত্র: The Guardian