জার্মানিতে একটি নতুন জোট সরকার গঠনের পথে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (CDU/CSU) এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (SPD) – এই দুই দলের মধ্যে সরকার গঠনের বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে, যা চরম-ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (AfD)-কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখবে।
এই চুক্তির ফলে, জার্মানির অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা এবং অভিবাসন নীতি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে CDU/CSU সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে ছিল, কিন্তু সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে তাদের SPD-র সমর্থন প্রয়োজন ছিল।
নতুন এই জোট সরকারে ফ্রেডরিখ মার্চ (Friedrich Merz), যিনি অ্যাঞ্জেলা মার্কেল-এর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী মে মাসের শুরুতে তিনি এই পদে শপথ নিতে পারেন।
এই চুক্তিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য কর ছাড়, কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস, এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও, সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ‘ঋণ-নিয়ন্ত্রণ’ নীতির সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সীমান্ত নীতিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে জার্মানি অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করতে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাইছে।
তবে, SPD-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আশ্রয়ের মৌলিক অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা হবে এবং জার্মানি একটি অভিবাসন-বান্ধব দেশ হিসেবেই থাকবে, যা নতুন আগতদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত করে।
SPD-র নেতা লার্স ক্লিংবেইল (Lars Klingbeil) বলেছেন, এই জোট জার্মানির আধুনিকীকরণে কাজ করবে।
জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে এই পরিবর্তনগুলো এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন দেশটি অর্থনৈতিক মন্দা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতার সম্মুখীন হচ্ছে।
সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ-এর (Olaf Scholz) নেতৃত্বাধীন সরকারের দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে জার্মানিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল।
নির্বাচনে CDU/CSU ২৮.৫% ভোট পেলেও, AfD উল্লেখযোগ্যভাবে প্রায় ২১% ভোট পেয়েছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে কোনো চরম-ডানপন্থী দলের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
এই পরিস্থিতিতে, SPD-কে CDU/CSU-এর সঙ্গে জোট বাঁধতে রাজি হতে হয়, কারণ অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোট গড়ার সম্ভাবনা ছিল না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জোট সরকার গঠনের এই প্রক্রিয়া SPD-কে দর কষাকষিতে সুবিধা দিয়েছে। ফলে তারা পেনশন-এর হার ২০৩১ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছে।
এছাড়াও, তারা অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে। অন্যদিকে, CDU/CSU পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলো দেখাশোনা করবে।
জার্মানিতে এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, জার্মানি ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাই, নতুন সরকারের নীতিগুলো বিশ্ব বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান