কানাডার নাগরিকদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করা নিয়ে অনীহা বাড়ছে, যার ফলস্বরূপ আমেরিকার অর্থনীতিতে বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, শুল্ক বৃদ্ধি এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার কারণে এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পর্যটন একটি দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করা মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় সেখানকার অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে কানাডার নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক এখন আগের মতো উষ্ণ নেই। এছাড়া, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে অনেক কানাডিয়ান নাগরিকের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সীমান্তগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য এক প্রকার উদ্বেগের কারণ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কানাডার পর্যটকদের সবচেয়ে পছন্দের স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা, নিউ ইয়র্ক এবং টেক্সাস। কিন্তু এই রাজ্যগুলোতে এখন কানাডিয়ান পর্যটকদের আগমন কম দেখা যাচ্ছে। এর ফলে সীমান্ত অঞ্চলের ছোট শহরগুলোতে ব্যবসা প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
কানাডার এয়ারলাইন্সগুলোও পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের ফ্লাইট রুটে পরিবর্তন আনছে। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে কানাডার অভ্যন্তরীন রুটে ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। কিছু এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইট বাতিলও করেছে।
পর্যটন বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতি সাময়িক নয়। কানাডার নাগরিকরা এখন এমন গন্তব্যগুলোতে ভ্রমণ করতে চাইছে, যেখানে তারা নিজেদের আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। অনেক কানাডিয়ান এখন ইউরোপ, জাপান, মেক্সিকো এবং ডমিনিকান রিপাবলিকের মতো দেশগুলোতে ভ্রমণে আগ্রহী হচ্ছে। এছাড়া, দেশের অভ্যন্তরেও ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ছে।
বিশেষ করে, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পার্বত্য অঞ্চল এবং নোভা স্কোটিয়ার সমুদ্র সৈকতগুলোতে ভ্রমণের চাহিদা বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন সংস্থা (ইউএসটিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, কানাডার পর্যটকেরা যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় ২০.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে, যা আমেরিকার প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। যদি কানাডার পর্যটকদের সংখ্যা ১০ শতাংশ কমে যায়, তবে ১৪ হাজার মানুষের কাজ হারানোর সম্ভবনা রয়েছে এবং এর ফলে প্রায় ২.১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে।
পর্যটন বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘এক্সপেডিয়া ব্র্যান্ড গ্রুপ’-এর প্রধান মেলানি ফিশ জানান, “কানাডার পর্যটকেরা এখন গ্রীষ্মকালে ইউরোপ, জাপান এবং মেক্সিকোর মতো বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে বেশি আগ্রহী। এছাড়া, তারা নিজেদের দেশের আকর্ষণীয় স্থানগুলোও নতুন করে আবিষ্কার করছে।
কানাডার অনেক নাগরিক মনে করছেন, এই গ্রীষ্মে তারা তাদের সুন্দর দেশটিতেই সময় কাটাবেন। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পর্বতমালা থেকে শুরু করে আটলান্টিক উপকূলের আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতগুলোতে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন তারা।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার