যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে উদ্বেগ।
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ঘটনা বাড়ছে। শুধু তাই নয়, সামান্য অপরাধের কারণেও অনেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এতে করে বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ। সম্প্রতি, দেশটির সরকার বহিষ্কারের কারণগুলোও বিস্তৃত করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সম্প্রতি সময়ে ২৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। যাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন গবেষক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
ভিসা বাতিলের পেছনে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হলেও, অনেক ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কারণ জানানো হয়নি। এমনকি অনেক সময় সামান্য ভুলের কারণেও ভিসা বাতিল করা হচ্ছে।
যেমন, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক রুশ গবেষক, ক্ষেনিয়া পেট্রোভা, ফ্রান্স থেকে ফেরার সময় পরীক্ষার জন্য আনা কিছু ব্যাঙের ভ্রূণ ঘোষণা করতে ভুলে যান। এই ‘ভুল’-এর কারণে তাকে আটক করা হয় এবং তার ভিসা বাতিল করা হয়।
যদিও আইনজীবীরা বলছেন, এটি ছিল একটি অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি, যার জন্য এমন কঠোর শাস্তি দেওয়াটা ন্যায়সংগত নয়। বর্তমানে, পেট্রোভা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন এবং তাকে রাশিয়া ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
শুধু পেট্রোভাই নন, এমন আরও অনেকের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। জানা গেছে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় মাহমুদ খলিল নামের এক শিক্ষার্থীরও ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া, মাইনর অপরাধের কারণেও অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, পুরোনো কিছু মামলার কারণেও ভিসা বাতিল করা হচ্ছে, যার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী ডেভিড উইলসন মনে করেন, ভিসা হলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চাবি। কিন্তু মাঝপথে কাউকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এভাবে দেশ থেকে বের করে দেওয়াটা একাডেমিক সেশনের মাঝখানে খুবই উদ্বেগের।
এই পরিস্থিতিতে, অনেক শিক্ষার্থী আদালতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ডার্টমাউথ কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের এক চীনা শিক্ষার্থী, শিয়াওতিয়ান লি-ও তার ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন।
তার আইনজীবীরা বলছেন, শিয়াওতিয়ান কোনো অপরাধ করেননি এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার অবশ্য ভিসা বাতিলের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে নারাজ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা নির্দিষ্ট কোনো ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য করতে চায় না।
তবে, যাদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে, তাদের অনেককে দ্রুত দেশ ত্যাগ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। এমনকি, তাদের শুনানির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এমন পদক্ষেপে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিলাডেলফিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা সবাই খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আমরা জানি না, এরপর কী হবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন সময়ে সামান্য ভুলের শিকার হচ্ছেন, তাদের জন্য এটি আরও উদ্বেগের কারণ।
কারণ, তাদের দ্রুত দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন