**আমেরিকান নভোচারীদের মঙ্গল গ্রহে পাঠানোকে অগ্রাধিকার দেবেন নাসার নতুন প্রধান**
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র নতুন প্রধান হিসেবে সম্ভবত দায়িত্ব নিতে চলেছেন জ্যারেড আইস্যাকম্যান। তিনি যদি সিনেট প্যানেলের অনুমোদন পান, তাহলে তাঁর প্রধান আগ্রহ থাকবে নভোচারীদের মঙ্গল গ্রহে (Mars) পাঠানো।
তবে চাঁদে (Moon) মানুষ পাঠানোর বর্তমান পরিকল্পনাও তিনি বাতিল করতে রাজি নন। বুধবার (Wednesday) সিনেট শুনানিতে এমনটাই জানিয়েছেন এই বিলিয়নেয়ার।
আইস্যাকম্যান একজন সফল ব্যবসায়ী, যিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মহাকাশ ভ্রমণে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। তিনি নাসার ১৫তম প্রধান হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী।
তাঁর মতে, ২০২৭ সালে চাঁদে মানুষ পাঠানোর যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা সময় মতো সম্পন্ন করা দরকার এবং এতে কত খরচ হবে, সে বিষয়েও নজর রাখা প্রয়োজন।
নাসার বর্তমান ‘মুন-টু-মার্স’ (Moon-to-Mars) প্রকল্পের অধীনে, চাঁদে মানুষ পাঠানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
১৯৭২ সালের পর এই প্রথম মানুষ আবার চাঁদে পা রাখবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নভোচারীরা চাঁদে একটি স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করবেন।
যেখানে গবেষণা ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলবে, যা ২০৩০ দশকের শেষের দিকে প্রথম মানব-অভিযান-সহ মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্য জরুরি।
আইস্যাকম্যান এই সময়সূচী দ্রুত করতে চান। একইসঙ্গে তিনি চান, চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের অভিযানগুলি একসঙ্গে চলুক।
তাঁর মতে, এই দুটি বিষয় ‘অথবা’ (either-or) গোছের নয়। আগামী বছর চাঁদে অভিযান চালাবেন এমন চারজন নভোচারীর উপস্থিতিতে তিনি এই কথা বলেন।
টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর এবং কমিটির চেয়ারম্যান, টেড ক্রুজ, আইস্যাকম্যানের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, নাসা’র উচিত দ্রুত চাঁদের দখল নেওয়া, কারণ চীন (China) মহাকাশে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
ক্রুজ আরও বলেন, “আমরা আর একটি মহাকাশ প্রতিযোগিতার দিকে যাচ্ছি না, বরং সেটি এখনই শুরু হয়ে গেছে। চীন মহাকাশে আধিপত্য বিস্তারের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
আইস্যাকম্যান মনে করেন, নাসা’কে একটি ‘মিশন-ফার্স্ট’ (mission-first) সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে আনা দরকার। তিনি স্বীকার করেন, তিনি এই পদের জন্য ‘সাধারণ প্রার্থী’ নন, তবে তাঁর মহাকাশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে তিনি ‘পোলারিস ডন’ (Polaris Dawn) মিশনে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে তিনি প্রথম বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশে হেঁটেছিলেন। এছাড়াও ২০২১ সালে, তিনি বিশ্বের প্রথম বেসরকারি নভোচারীদের একটি দলে ছিলেন, যারা তিন দিনের মহাকাশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন।
নাসার ৬৬ বছরের ইতিহাসে খুব কম প্রশাসকই মহাকাশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন।
বিল নেলসনের (Bill Nelson) উত্তরসূরি হিসেবে আইস্যাকম্যান যদি নির্বাচিত হন, তবে তিনি হবেন সর্বকনিষ্ঠ প্রধান। সিনেটর ক্রুজের মতে, মহাকাশ শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মুহূর্তে আইস্যাকম্যান নাসা’র নেতৃত্ব দেবেন।
বর্তমানে স্পেসএক্স (SpaceX) এর মতো বেসরকারি সংস্থাগুলি এই শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ক্রুজ আরও যোগ করেন, “নাসা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাণিজ্যিক মহাকাশ খাতের দ্রুত বৃদ্ধি, যেমন হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারক থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যটন পর্যন্ত, মহাকাশ এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এনেছে।
মহাকাশ এখন কেবল কয়েকটি দেশের বা সরকারি সংস্থার একচেটিয়া অধিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মহাকাশের এই গণতান্ত্রিকরণ অগ্রগতি এনেছে, উৎক্ষেপণ এবং স্যাটেলাইটের খরচ কমিয়েছে, এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অনুসন্ধিৎসা বাড়িয়েছে।
একইসঙ্গে, ভবিষ্যতের সীমান্ত এখন আগের চেয়ে আরও অনিশ্চিত।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান