ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে লড়ছে ১৫৫ জন চীনা নাগরিক: জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে এমন ১৫৫ জনের বেশি চীনা নাগরিকের বিষয়ে তারা অবগত। তিনি বেইজিংকে এই যোদ্ধাদের নিয়োগের বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন এবং ইউক্রেন আক্রমণের অনুমতি দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

জেলেনস্কি সাংবাদিকদের জানান, চীন সরকার সরাসরি এই নাগরিকদের রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করার কোনো নির্দেশ দিয়েছে, এমনটা তিনি মনে করেন না। তবে তিনি বলেন, বেইজিং নিশ্চয়ই অবগত ছিল যে কিছু লোক অর্থের বিনিময়ে অন্য দেশের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে তারা [চীন] বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল। আমরা দেখেছি যে এসব চীনা নাগরিক ইউক্রেনের ভূখণ্ডে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং তারা অস্ত্র ব্যবহার করছে। তাদের উদ্দেশ্য, অর্থ নাকি রাজনীতি—সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি, তবে তা অবশ্যই জানা যাবে।’

ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রকাশিত নথিতে ১৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১৩ জন চীনা সেনার ছবি এবং তাদের পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য ছিল। অন্য একটি নথিতে চীনা নাগরিকদের নাম, জন্ম তারিখ, তাদের রুশ ইউনিটের নাম এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের কোথায় নিয়োগ করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘এই ‘চীনা’ বিষয়টি গুরুতর। ১৫৫ জন মানুষের নাম ও পাসপোর্টের বিবরণ রয়েছে—এরা সবাই চীনা নাগরিক, যারা ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমরা মনে করি, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি।’

এদিকে, বুধবার চীনের কর্মকর্তাদের মন্তব্যে জানা গেছে, এসব ব্যক্তি তাদের নিজস্ব উদ্যোগে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। তবে বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চীনা নাগরিক জড়িত—এমন ধারণা ভিত্তিহীন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘চীনা সরকার সবসময় চীনা নাগরিকদের সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে থাকতে, কোনো ধরনের সশস্ত্র সংঘাত এড়িয়ে চলতে এবং বিশেষ করে কোনো পক্ষের সামরিক অভিযানে অংশ না নিতে বলে।’

চীন এই দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ থাকার কথা বললেও রাশিয়া তাদের অস্ত্র শিল্পে চীনা-নির্মিত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। ইউক্রেনও একই কাজ করে। উভয় পক্ষই চীনা প্রস্তুতকারক ডিজেআই-এর তৈরি ড্রোন ব্যবহার করে, যদিও কিয়েভ বেইজিং থেকে পাওয়া সরঞ্জামের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে।

জেলেনস্কি আরও জানান, রাশিয়া টিকটক এবং অন্যান্য চীনা সামাজিক নেটওয়ার্কে সরাসরি বিজ্ঞাপন দিয়ে চীনা যোদ্ধা নিয়োগ করছে এবং ‘বেইজিং বিষয়টি সম্পর্কে অবগত’। এরপর তারা রাশিয়ায় যায়, সাধারণত মস্কোতে। সেখানে তাদের প্রথমে তিন থেকে চার দিনের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এরপর এক বা দুই মাসের প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়।

জেলেনস্কি আরও জানান, এসব যোদ্ধা রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক মাইগ্রেশন কার্ড পায় এবং অর্থ পাওয়ার জন্য একটি অফিসিয়াল পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার পায়।

কিয়েভ এর আগে যুদ্ধে বন্দী হওয়া দুই চীনা নাগরিকের নাম প্রকাশ করেছে: ১৯৯১ সালে জন্ম নেওয়া ওয়াং গুয়াংজুন এবং ১৯৯৮ সালে জন্ম নেওয়া ঝাং রেনবো। ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার হাতে বন্দী ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে তাদের বিনিময়ে রাজি আছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *