ট্রাম্পের শুল্ক: এশীয় বাজার থেকে কেনাকাটায় দুঃশ্চিন্তা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এই নীতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিভিন্ন এশীয় সম্প্রদায়ের মানুষজন তাদের পছন্দের খাদ্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

বিশেষ করে, এশীয় বাজারগুলোতে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোয় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশি ভোক্তাদের মনেও প্রশ্ন জাগতে পারে, কিভাবে এই ঘটনা তাদের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে?

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে, বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেস এবং টেক্সাসের মত শহরগুলোতে, বিভিন্ন এশীয় সুপারমার্কেট রয়েছে, যেখানে জাপানি মেয়োনিজ, চাইনিজ সয়াসস-এর মত পরিচিত পণ্যগুলো পাওয়া যায়। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে এই পণ্যগুলোর দাম বাড়তে শুরু করেছে, যা এইসব বাজারের নিয়মিত ক্রেতাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“৯৯ র‍্যাঞ্চ মার্কেট” এবং “এইচ মার্ট”-এর মত জনপ্রিয় বাজারগুলোতে কেনাকাটা করা অনেক ক্রেতা, বিশেষ করে এশীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান এবং অভিবাসীরা, এখন তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

এই শুল্ক নীতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পণ্যের ওপর। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া থেকে আসা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনও এর প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা বাণিজ্য যুদ্ধ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

যদিও ট্রাম্প কিছুদিনের জন্য চীনের বাইরে অন্যান্য দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক স্থগিত করেছিলেন, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের খাদ্য সামগ্রী পাওয়া যায়। এইসব বাজারে সাধারণত স্থানীয় সুপারমার্কেটগুলোর তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম দামে পণ্য পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ, “লি কুম কী পান্ডা” ব্র্যান্ডের ওয়েস্টার সস-এর দাম স্থানীয় বাজারে বেশি হলেও, এশীয় বাজারগুলোতে তা সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। এর ফলে, অনেক অভিবাসী এবং বিদেশি শিক্ষার্থী, যারা তাদের দেশের খাবারের স্বাদ পছন্দ করেন, তারা এই বাজারগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

তবে, এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে অনেক দোকানে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে, ভোক্তাদের মধ্যে জিনিসপত্রের বিকল্প খুঁজে বের করার প্রবণতা বাড়তে পারে। যেমন, ১৯৮০-এর দশকে যখন অভিবাসীরা প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, তখন তারা তাদের দেশের মত চাল খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়েছিলেন।

সময়ের সাথে সাথে তারা বিভিন্ন বিকল্পের সাথে পরিচিত হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতেও, মানুষজন তাদের পছন্দের খাবারের জন্য বিকল্প খুঁজে নিতে পারে।

দক্ষিণ এশীয় বাজারগুলোতেও এই শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে, ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মত দেশ থেকে আসা চাল ও মশলার দাম বাড়তে পারে। যেহেতু এই বাজারগুলো ছোট সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই তাদের ওপর এই শুল্কের প্রভাব আরও বেশি হতে পারে।

দোকান মালিকরা আশঙ্কা করছেন, দাম বাড়লে তাদের ব্যবসার ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত জিনিস কেনার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। তবে, এটি বাজারের জন্য ভালো নাও হতে পারে। শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়লে, তা মূলত কম আয়ের পরিবারগুলোর ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে।

কারণ, তাদের আয়ের একটি বড় অংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের পেছনে খরচ হয়।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশি ভোক্তাদেরও সচেতন থাকতে হবে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের ফলে খাদ্যপণ্যের দামে পরিবর্তন আসতে পারে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি এবং নীতিগুলো কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *